বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

আজীবন সংগ্রামী সৈনিক শ্রমিক নেতা কমরেড জসিম মন্ডল
আজীবন সংগ্রামী সৈনিক শ্রমিক নেতা কমরেড জসিম মন্ডল

কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল (জন্মঃ ১৯২২ইং মৃত্যুঃ ২ অক্টোবর, ২০১৭ইং) অগ্নী-যুগের বিপ্লবী আজীবন সংগ্রামী শ্রমিক নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সন্তান এবং ঈশ্বরদী টেংরীর মুক্তি মোড়ের বাসিন্দা অনলবর্ষী বক্তা, শোষিত-নিপীড়িত, বঞ্চিত শ্রমজীবি মেহনতি মানুষের নেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল।

সিপিবি কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলে, গণমানুষের মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম এই পুরোধা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় পলিট ব্যুরোর সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। আপাদমস্তক একজন প্রজ্ঞাবান রাজনীবিদ। সু-বক্তা সারাজীবন খেটে খাওয়া মানুষের জন্য লড়েছেন, রাজপথে থেকেছেন, জেল খেটেছেন।

কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডলের জন্ম ১৯২২ সালে নদিয়া জেলা (বর্তমান কুষ্টিয়া) দৌলতপুর থানার খালিদাসপুর গ্রামে নানার বাড়িতে। তার বাবা মরহুম হাওস উদ্দিন মণ্ডল। মা মরহুমা জহুরা খাতুন। রাজনীতির হাতে খড়ি কলকাতায়। বৃটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, তে-ভাগা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। মহান ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জেলে থাকলেও রাজপথের মিছিলে থাকতো তার মন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ গণ অভ্যুত্থানসহ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন নিবেদিত সংগঠক। স্বাধীনতার পর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও শ্রমজীবি মানুষকে সংগঠিত করতে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি প্রায় ২৩ বছর জেল খেটেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের দাবি আদায়ের জন্য তার যে রাজনীনৈতিক দর্শন তিনি সেটা বুকে লালন করেছে আজীবন।

তাঁর বাবা হাওস উদ্দিন মণ্ডল রেলওয়েতে চাকরি করতেন। বাবার চাকুরীর সুবাদে সিরাজগঞ্জে, রানাঘাটে, পার্বতীপুর, ঈশ্বরদী, কোলকাতায় বসবাস করেন। বাবার সাথে কোলকাতায় নারকেলডাঙা রেল কলোনিতে বসবাসকালে মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়সে মিছিলে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৪০ সালের মাঝামাঝিতে শিয়ালদহে মাসিক ১৫ টাকা মাইনেতে রেলের চাকরিতে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি ক্রমে লাল ঝাণ্ডার একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিতি পান।

১৯৪০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)’র সদস্য পদ লাভ করেন।

১৯৪১-৪২ সালে জসিম মন্ডলের প্রমোশন পেয়ে সেকেন্ড ফায়ারম্যান হন।

রেল শ্রমিক আন্দোলনে তিনি জ্যোতি বসুর সহকর্মি ছিলেন। ১৯৪৬ এর নির্বাচনে রেল আসনে জ্যোতিবসু’র নির্বাচী প্রচারনায় সক্রিয় অংশ নেন।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর জসিম মন্ডল পার্বতীপুর এবং তাঁর বাবা ঈশ্বরদীতে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৪৯ সালে রেলের রেশনে চাউলের পরিবর্তে খুদ সরবরাহ করলে রেল শ্রমিক ইউনিয়নের ‘খুদ স্টাইকের’ অপরাধে জসিমউদ্দিন মন্ডলসহ ছয় নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং রেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকুরীচ্যুত করে। ১৯৫৪ সালে তিনি মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পর আবার তাঁকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হলো। এসময় রাজশাহী জেলে কিছুদিন থাকার পর তাঁকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হল। ১৯৫৬ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬২ সালের দিকে আবার গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৪ সালে মুক্তি পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতা চলে যান। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের সার্বিক মুক্তির লড়াই-সংগ্রামের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশেও তাঁকে জেল বরণ করতে হয়েছে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৫১ বছর বয়সে জসিম মন্ডল সংগঠক এবং উদ্দীপক হিসেবে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন।

১৯৭৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন।

১৯৯৩ সালে সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১২ সালে সিপিবি’র উপদেষ্টা মনোনীত হন। আমৃত্যু এ দায়িত্ব তিনি পালন করেন।

কমরেড জসিম মন্ডল বাংলাদেশ রেল শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা ছিলেন।

কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল ১৯৪২ সালে জাহানারা খাতুন মরিয়মের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কমরেড মরিয়ম তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ জুগিয়েছেন সারাজীবন। জসিম-জাহানারা দম্পতি পাঁচ কন্যা ও এক পুত্রের জনক-জননী ছিলেন।

অনলবর্ষী বক্তা কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল আজ ২ অক্টোবর, ২০১৭ ঢাকার হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

দেশের কমিউনিষ্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, রেল রক্ষা আন্দোলনের নেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল’র এই প্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধা ও লাল সালাম জানিয়ে দলমত নির্বিশেষে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক প্রকাশ করেন, সিপিবি, বাসদ, জাসদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, উদিচী শিল্পী গোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ জেলার বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

৯১ বছরে তারুণ্যে উদ্দীপ্ত কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল পরিবেশ বান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও সল্পখরচে যোগাযোগ মাধ্যম রেলওয়েকে রক্ষা ও উন্নত করার দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন কিছুদিন আগেও। ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১২, শনিবার, সকাল ১১ টায়, ২ কমরেড মণি সিংহ সড়কস্থ মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আহবান করেছিলেন তিনি।

রেলওয়েকে রক্ষা ও উন্নত করার দাবীসমূহ নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

  • সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব গণযোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে রেলকে অগ্রাধিকার দাও।
  • বিপুল সংখ্যায় নতুন রেল ইঞ্জিন, বগি ও ওয়াগন ক্রয় ও নির্মাণ করো, রেল লাইন বাড়াও, বৈদ্যুতিক রেল চালু করো।
  • ট্রেনের সময়-ব্যবস্থাপনা ও সেবা উন্নত করো, শূন্য পদে নিয়োগ দাও, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করো।
  • ওর্য়াকশপগুলো আধুনিকায়ন ও পুরোপুরি চালু করো।
  • রেলের জমি পুনরুদ্ধার ও রক্ষণাবক্ষেণ করো, সকল প্রকার দুর্নীতি বন্ধ করো।
  • সরাসরি লাইন স্থাপনের মাধ্যমে দূরত্ব কমাও, র্সবত্র ডবল লাইন চালু করো।
  • বড় শহর ও উপশহরগুলোতে আধ ঘণ্টা পর পর শাটল ট্রেন চালু করো।
  • বিশ্বব্যাংক, দেশি-বিদেশি লূটেদারদের পরার্মশে রেলকে “বসকরণনীতি” বাতিল করো।
  • পণ্য পরিবহণে বন্দর সমূহের সাথে রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ ও উন্নত করো।
  • মন্ত্রী, এমপি, আমলারা গাড়ির বদলে রেল, বাস, লঞ্চে যাতায়াত করুন।

 

 

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন