বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বাংলাদেশের সেরা এ্যাডভোকেট কুষ্টিয়ার নকীব উদ্দীন আহমেদ
বাংলাদেশের সেরা এ্যাডভোকেট কুষ্টিয়ার নকীব উদ্দীন আহমেদ

ন্যায় নিষ্ঠা, সততা, একাগ্রতা, ধৈর্য সঞ্চয়ী মনোভাব যে একটি মানুষকে শুন্য থেকে অগাধ সম্পদের মালিক করতে পারে যশ প্রতিপত্তি সমাজে সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরন সর্বময় শ্রদ্ধেয় জনাব নকীব উদ্দীন আহমেদ। তিনি একজন জীবন্ত আইনের লাইব্রেরি হিসেবে খ্যাত। অসীম স্মরন শক্তি তাকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছে।

জনাব নকীব উদ্দীন আহমেদ ১৯৩৩ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাধীন খাশ মথুরাপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা হুরমত উল্লাহ, মাতা সুবাসী খাতুন, সে পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। তার শিক্ষা জীবন খুবই কষ্টকর ছিলো। প্রথমে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। বাড়ী থেকে প্রায় ৮/১০ মাইল দূরে প্রতিদিন পায়ে হেটে যাওয়া আসা করতেন, বর্ষাকালে গামছা পরে বই, খাতা, জামা, কাপড় মাথাই বেঁধে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করতেন। কি শীত, কি বর্ষা, কি ঝড় বৃষ্টি কোন দিন তিনি স্কুল মাদ্রাসা যাওয়া বন্ধ করননি। একই ভাবে প্রাইমারী শিক্ষা জীবন শেষ করে জুনিয়াদহ হাইস্কুলে ভর্তি হন। জুনিয়াদহ লজিং থেকে ছাত্র পড়িয়ে পরে সারারাত নিজের লেখাপড়া করতেন। এই ভাবে বহু কষ্টের মাঝেও ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করে কুষ্টিয়া কলেজে ভর্তি হন। পদ্মার পারে বারো বোয়ালদহ গ্রামে লজিং থেকে বি,কম পাশ করেন। তিনি লজিং বাড়ীতে যেই চৌকিতে শুতেন সেই চৌকিটা এখনও তার বাড়ীর বারান্দায় রক্ষিত আছে। জীবিত থাকা অবস্থায় সকাল বিকাল তিনি ঐ চৌকির উপর বসে রাস্তার মানুষকে ডেকে গল্প করতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে এল,এল,বি ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫৮ সালে কুষ্টিয়া বারে যোগদান করেন। পেশার প্রথম জীবনে আট আনা আয় করলে ছয় আনা সঞ্চয় করতেন। বাহির বোয়ালদাহ গ্রামে রোকেয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

জনাব নকীব সাহেবের সিনিয়র জনাব আব্দুর রহিম ও জনাব আব্দুর রহিমের সিনিয়র জনাব মাহতাব উদ্দীন ওকালতি জীবনে সফল ব্যক্তি। বিচারকগন কোন সমস্যায় পড়লে তার সরনাপন্ন হতেন। তার জুনিয়র সংখ্যা ৭০/৮০ জন। ডাইরেক্ট জুনিয়র গনের বাইরে অন্য কোন এ্যাডভোকেট কোন আইনগত সমস্যায় পড়লে বা আরজি জবাব লেখার সাজেশন নিতে আসলে তিনি আগে তাদের কুশল জিজ্ঞাসা করতেন, তার বাড়ীর খবরা খবর নিয়ে তারপরে কাজটা করে দিতেন। কোন এ্যাডভোকেট সাহেবের কাজে সাহায্য করে কোন ফি নিতেন না। তার সফল জুনিয়রদের মধ্যে জিনাব সিরাজুল ইসলাম, মরহুম আজিজুর রহমান, নুরুল আমিন, আশরাফ হোসেন, মসলেম উদ্দীন সাফল্য লাভ করেছে। নুরুল আমিনকে হাইকোর্টে সিভিলের জাহাজ বলে ডাকে। তার জুনিয়র গনের মধ্যে মাহতাব উদ্দীন সাহেব জেলা জজ, লুৎফর রহমান এডিশনাল জেলা জজ।

ছোট খাটো সাইজের লোক হলেও অসীম সাহসী ছিলেন এই মানুষটি। এরশাদ শাসনামলে মার্শাল’ল এর সময় আর্মিরা এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন কে কোর্ট কম্পাউন্ডের মধ্যে চড় মেরেছিলো। জনাব নকিব উদ্দীন তখন কুষ্টিয়া বারের সভাপতি, সিরাজুল ইসলাম সম্পাদক।

তিনি চরম প্রতিবাদ করেছিলেন এবং আর্মির বিরুদ্ধে রেজুলেশন নিয়েছিলেন। বর্তমান হাইকোর্টের বিচারক জনাব ফজলুর রহমান এক সময় মেহেরপুরের মুনসেফ ছিলেন। তিনি গল্প করেছেন, নকীব সাহেবের মতো এতো সাহসী লোক আমি কোথাও দেখিনি। সেই সময় কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরের বিচারকগনের প্রতিমাসে কুষ্টিয়া জজ সাহেবের এখানে কনফারেন্স হত। ঐ কনফারেন্সে নকীব সাহেব জজ সাহেবের ঘুষ খাওয়া মর্মে অভিযোগ তোলেন। তার কথা শুনে বিচারকগন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। এই সাহস কোন এ্যাডভোকেট কোনদিন দেখাতে পারেননি। এখন এ্যাডভোকেট সাহেবগন বিচারকগনের অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে সাহস পাইনা।

জনাব নকীব সাহেব অতি সাধারন জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তিনি একজন দানশীল ব্যক্তি ছিলেন যেটা কেউ জানতেন না বা কাউকে জানতে দিতেন না। গরীব মানুষের কন্যাদায়, গরীব ছাত্রদের লেখেপড়ার খরচ তিনি অতি গোপনে দিতেন। তিনি কুষ্টিয়া হোমিও প্যাথিক কলেজকে জমি দান করে গেছেন। যার বর্তমান মুল্য প্রায় ২০ লক্ষ্য টাকা। তিনি আইন জীবিদের মাঝে এতই গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তি ছিলেন যে, কুষ্টিয়া বারে সাতবার সভাপতি ও পাচঁবার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সমাজ সংস্কারক

তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক, ন্যায় পরায়ন ও ধর্মভীরু প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। চেতনায় তিনি ছিলেন একজন প্রগতিশীল মানুষ। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাহিত্যের ভুবনে ছিলো তার অবাধ বিচরন। আইন বিষয়ক রচিত মুসলিম, হিন্দু ও উত্তরাধিকার বইটি পড়লেই বোঝা যায় বাংলা ভাষার উপরে তার জ্ঞানের গভীরতা।

সংগীত বিষয়ে তার ছিলো আগাধ আগ্রহ। কুষ্টিয়ার সুখ্যাতি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘বোধদয়’ এ তিনি নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

কুষ্টিয়ার মানুষ কোন সমস্যা, দাঙ্গা, গন্ডগোল, মারামারিতে পড়লে, কুষ্টিয়ার আইন শৃঙ্গলায় সমস্য হলে সিবাই তার কাছে আসতেন। কুষ্টিয়ার অভিভাবক হিসাবে তিনি যে কোন সমস্যায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের তিনি আহবায়ক ছিলেন। তার ব্যাক্তিত্বে ও যোগ্য নেতৃত্বে কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদ বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।

তিনি কুষ্টিয়া মুসলিম হাই স্কুলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে ও মথুরাপুর পিপলস কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। কুষ্টিয়া যক্ষা সমিতি, জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি ও রেডক্রিসেন্ট সমিতি, কুষ্টিয়া শিশু কল্যান ফাউন্ডেশন ও হাসপাতাল, কুষ্টিয়া হোমিওপ্যাথিক কলেজ, কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ, বি,এ,ভি,এস সমিতি প্রভৃতি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে তিনি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঐ সমস্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমুহ ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

কুষ্টিয়া ‘ল’ কলেজের তিনি উন্নতম প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত তিনি ‘ল’ কলেজে সুনামের সাথে অধ্যাপনা করেছেন। তাছাড়া তিনি কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করেছেন।

রাজনৈতিক জীবন

মরহুম নকীব উদ্দীন আহমেদ ৬০ এর দশকে তৎকালীন আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিসাবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা উত্তর জাসদের জন্ম থেকে তিনি বৃহত্তর কুষ্টিয়ার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং যোগ্য নেতৃত্বের সাক্ষর রেখেছেন।

পারিবারিক জীবন

কোন বিত্ত বৈভব নয়, অত্যান্ত সাদামাটা জীবন যাপন করেছেন। তিনি আমাদের সবার কাছে প্রাতঃ স্মরনীয় ও দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

মরহুম নকীব উদ্দীন আহমেদ ৬ পুত্র ও ৩ কন্যা জীবিত রেখে মারা গেছেন।
১ম পুত্র - আবু সালেহ মোঃ রেজা [বিবাহিত] তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
২য় পুত্র – আবু সালেহ মোঃ মোর্তজা [বিবাহিত] তিনিও একজন ব্যবসায়ী।
৩য় পুত্র – আবু সালেহ মোঃ মোস্তফা [বিবাহিত] এম,কম দীর্ঘদিন আমেরিকায় কাটিয়েছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়াতে ব্যবসায় নিয়োজিত আছে।
৪র্থ পুত্র – এ্যাডঃ আবু সালেহ মোঃ মুসা। কুষ্টিয়া আইনজীবি সমিতির একজন সদস্য।
৫ম পুত্র – আবু সালেহ মোঃ শরীফ এম,কম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসিসটেন্ট কন্ট্রোলার পদে চাকুরীরত আছেন।
৬ষ্ঠ পুত্র – আবু সালেহ মোঃ মোরশেদ। অবিবাহিত সৌদি আরবে চাকুরীরত ছিলেন।
১ম কন্যা – তহমীনা খাতুন। স্বামী – মোঃ জালাল উদ্দীন মিয়া প্রকৌশলী।
২য় কন্যা – তাসমিনা খাতুন। স্বামী এ্যাডঃ জামাল আক্তার বুলবুল। সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
৩য় কন্যা – ডাঃ মুনিরা আফরিন শীলা। এম,বি,বি,এস।

মরহুম নকীব উদ্দীন আহমেদ এর মতো সহজ, সরল, বিনয়ী,বন্ধুবৎসল, মেধাবী, বিচক্ষন মানুষকে আমরা হারিয়েছি।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.