বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী, (ইংরেজি: Syed Ahmed Ullah Maizbhanderi) বা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (১৫ জানুয়ারি ১৮২৬ - ২৩ জানুয়ারি ১৯০৬) হলেন একজন সুফি সাধক ও মাইজভান্ডারী তরীকা প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী নামেই বহুল পরিচিত। তার অনুসারীগণ যে সকল প্রচার-প্রকাশনা বাংলা, আরবি, উর্দু এবং ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে আসছে, তাতে তার নাম গাউছুল আজম হযরত মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী কেবলা ক্বাবা কাদ্দাছাল্লাহু ছিরহুল আজিজ / (কঃ) লিখতে দেখা যায়। এছাড়াও তিনি গাউছুল আজম, হযরত কেবলা, বড় মৌলানা, খাতেমুল অলদ, শাঁই-এ-লিল্লাহ্ প্রভৃতি উপনামেও পরিচিত।

জন্ম

আহমদ উল্লাহ ১৮২৬ সালে ১৪ জানুয়ারী (১ম মাঘ, ১২৩৩ বাংলা সন) চট্টগ্রাম শহর হতে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে তৎকালীন প্রত্যন্ত মাইজভান্ডার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী ও মাতার নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা। তার পারিবারিক নাম ছিল সৈয়দ আহমদ উল্লাহ।

বংশ পরিচয়

আহমদ উল্লাহর পুর্ব পুরুষ সৈয়দ হামিদ উদ্দিন, গৌড় নগরে ইমাম এবং কাজীর পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি গৌড় নগরে মহামারীর কারণে ১৫৭৫ সনে চট্রগ্রামের পটিয়া থানার কাঞ্চন নগরে বসতি স্হাপন করেন; সেখানে তার নামানুসারে হামিদ গাঁও নামে একটি গ্রাম আছে। তার এক পু্ত্র সৈয়দ আব্দুল কাদের ফটিকছড়ি থানার আজিমনগর গ্রা্মে ইমামতি উপলক্ষে এসে বসতি স্হাপন করেন। তার পুত্র সৈয়দ আতাউল্লাহ তৎ পুত্র সৈয়দ তৈয়বুল্লাহর মেজ় পুত্র সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভাণ্ডার গ্রামে এসে বসতি স্হাপন করেন।

শিক্ষা জীবন

আহমদ উল্লাহ গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ১২৬৮ হিজরীতে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে পরীক্ষায় পাশ করেন। সেখানেই তিনি তৎকালীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রিত অতিথি বা বক্তা হিসাবে যথেষ্ট সুনামের সাথে ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার কাজে লিপ্ত ছিলেন।

কর্ম জীবন

তিনি শিক্ষা জীবন শেষে করে হিজরী ১২৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের যশোর অঞ্চলের বিচার বিভাগীয় কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে মুন্সেফী অধ্যায়ন শুরু করেন। পরবর্তিতে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলিকাতায় মুন্সী বু আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেছ হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তি সময়ে মুন্সেফী পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ছিলেন।

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী হাদিস, তাফসির, ফিকহ, মন্তেক, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায় তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসাবে তার নামডাক বিশেষ ভাবে ছডিয়ে পড়ে। অল্প কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন।

বেলায়ত অর্জন

আহমদ উল্লাহ হযরত বড়পীর সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানীর বংশধর ও উক্ত তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত সৈয়দ আবু শাহামা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী নিকট বায়েত গ্রহনের মাধ্যমে বেলায়ত অর্জন করেন এবং সৈয়দ দেলওয়ার আলী পাকবাজ এর নিকট হতে এত্তাহাদী কুতুবিয়তের ক্ষমতা অর্জন করেন। তিনি দিনে দ্বীনি শিক্ষাদান ও রাতে এবাদত ও রেয়াজতের মাধ্যমে সময় কাটাতেন। বলা হয়, এভাবে কঠোর সাধনার ফলে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্চ বেলায়ত অর্জন করেছিলেন।

খলিফা

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী জীবদ্দশায় তাঁর সুফি তরীকার দীক্ষা সমাজে মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে বহু সুফি প্রতিনিধি বা খলিফা নিয়োগ করেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে ২০৪ খলিফার নাম ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সাংসারিক জীবন

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১২৭৬ হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাঁর স্ত্রী মারা যান। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিয়ে করেন। ১২৭৮ হিজরী সালে তাঁর প্রথম মেয়ে সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি জন্মগ্রহন করেন। কিন্তু মেয়েটি চার বছর বয়সে মারা যায়। এরপর তাঁর আরোও একটি ছেলে জন্মগ্রহন করে অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। অতঃপর ১২৮২ হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক (রঃ) এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহন করেন। তাঁর দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে ইন্তেকাল করেন।

মাইজভান্ডারী তরিকার উসুলে সাবআ বা সপ্ত পদ্ধতি

নফ্‌ছে ইনসানীর কুপ্রবৃত্তি বন্ধ করে রূহে ইনসানীর সুপ্রবৃত্তি জাগ্রত করার জন্য আহমদ উল্লাহ নির্বিঘ্ন ও সহজসাধ্য মাধ্যম হিসেবে সপ্ত-পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। সপ্ত-পদ্ধতি দুই স্তরে অনুশীলিত হয়।

ফানায়ে ছালাছা বা রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ স্তরঃ

  1. ফানা আনিল খাল্কঃ পরমুখাপেক্ষী না হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করা।
  2. ফানা আনিল হাওয়াঃ অনর্থক কাজকর্ম ও কথাবার্তা হতে বিরত থাকা।
  3. ফানা আনিল এরাদাঃ নিজ ইচ্ছা বাসনাকে খোদার ইচ্ছায় বিলীন করে তাছলিম ও রজা অর্জন করা।

মাউতে আরবা বা প্রবৃত্তির চতুর্বিধ মৃত্যুঃ

  1. মউতে আবয়্যাজ বা সাদা মৃত্যুঃ উপবাস ও সংযমের মাধ্যমে অর্জিত এই মৃত্যুতে মানব মনে উজ্জ্বলতা ও আলো দেখা দেয়।
  2. মউতে আছওয়াদ বা কালো মৃত্যুঃ সমালোচনায় বিরক্ত বা রাগান্বিত না হয়ে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজকে সংশোধনের মনমানসিকতা অর্জনই কালো মৃত্যু।
  3. মউতে আহমর বা লাল মৃত্যুঃ কামস্পৃহা ও লোভ-লালসা হতে মুক্তিতে হাসিল হয়।
  4. মউতে আখজার বা সবুজ মৃত্যুঃ নির্বিলাস জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে সবুজ মৃত্যু লাভ হয়।

টীকা

গাউছুল আজম অর্থ সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। অনেক মুসলিমের বিশ্বাস শুধু আল্লাহ হলেন সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। তারা অন্য কাউকে গাউছ বলার কঠিন প্রতিবাদ করেন। মূলত কোনো মানুষকে গাউছুল আজম বলা মুসলিম দলগুলোর মাঝে একটি বিতর্কিত বিষয়।

কুষ্টিয়া হতে কিভাবে যাবেনঃ-

কুষ্টিয়া হতে সরাসরি বাসে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। এছাড়া ট্রেন করে কুষ্টিয়া হতে ঢাকা, ঢাকা হতে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে নাজিরহাট বা খাগড়াছড়ি বাস যোগে ঝংকার নেমে সিএনজি যোগে দরবার শরীফ।

Add comment

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.