হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহিসওয়ার (রঃ) ছিলেন চৌদ্দ শতকের দরবেশ। এই মহাপুরুষ ইসলাম প্রচার করার উদ্দেশ্যে সুদূর বল্লখদেশ থেকে এই বগুড়া মহাস্থান গড়ে আগমন করেন। এখানে এসে হিন্দু রাজা পরশুরামকে পরাজিত করেন এবং ইসলাম ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত করে এখানেই শায়িত আছেন।
কথিত আছে যে, তিনি বলখ রাজ্যের রাজার পুত্র ছিলেন এবং এজন্য তিনি বলখী নামেও পরিচিত। শাহ সুলতান একান্ত অনাড়ম্বর জীবন পছন্দ করে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া রাজসিংহাসন ছেড়ে দামেস্কে এসে শেখ তৌফিকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
পীর শেখ তৌফিক শাহ, সুলতানকে বাংলায় গিয়ে ইসলাম প্রচার করার নির্দেশ দেন। সুফি মাহিসওয়ার মৎস্যাকৃতির বাণিজ্য জাহাজে সমুদ্রপথ অতিক্রম করে বাংলায় আগমন করেন এবং সন্দ্বীপে অবস্থান নেন। অতঃপর কিছুকাল পর জনাকীর্ণ ঢাকার হরিরামপুর নগরে আসেন এবং হিন্দু রাজা বলরামকে (খ্রি. ১১ শতক) তিনি পরাস্ত করেন। কালী উপাসক বলরাম তখন স্থানটি শাসন করছিলেন। রাজা শাহ সুলতানকে ইসলাম প্রচারে বাধা দেন। সংঘর্ষে রাজা মারা যান এবং তার অলৌকিকত্বে মুগ্ধ হয়ে রাজার মন্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মাহিসওয়ার কর্তৃক সিংহাসনে আরোহণ করেন।
অতঃপর শাহ সুলতান মহাস্থানের দিকে অগ্রসর হন। ১২০ জনের সুফীদলের একাংশ নিয়ে শাহ্ সুলতান মাহিসাওয়ার বলখী মহাস্থানে পৌঁছে সেখানকার শাসক পরশুরাম কে ইসলামের দাওয়াত দেন। এতে পরশুরাম ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ্ সুলতান মাহিসাওয়ার বলখী দলকে আক্রমন করেন। সে আক্রমনে শাহ্ সুলতান মাহিসাওয়ার বলখী ৭(সাত) জন শহীদ হন। শাহ্ সুলতান মাহিসাওয়ার বলখী এর শহীদ হওয়ার সংবাদে শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী তাঁর কায়কাউয়ার নামক সুফীদের সংঘবদ্ধ দলকে নিয়ে মহাস্থানে গমন করেন। তিনি সরাসরি পরশুরামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর একাত্মবাদ ও তার প্রেরীত পুরুষ হযরত মোহাম্মদ (দঃ) কে মেনে ইসলাম ধর্ম গ্রহনের প্রস্তাব দেন। স্থানীয় রাজা পরশুরাম ও তাঁর বোন শিলাদেবী এ প্রস্তাবে পরশুরাম পুনরায় ক্ষিপ্ত হলে শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী তাঁকে আক্রমন করেন। এতে পরশুরাম নিহত হয়েছিল এবং শিলাদেবী করতোয়া নদীতে প্রাণ বিসর্জন।
শাহ সুলতানের আগমন এবং রাজা বলরাম ও পরশুরামের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের কাহিনী শুধু জনশ্রুতির মাধ্যমে জানা যায়। তিনি মাহিসওয়ার (মাছের পিঠে আরোহী) নামে সমধিক পরিচিত। এদেশে মাহিসওয়ার আওলিয়াগণ বেশ জনপ্রিয়। শাহ সুলতান মাহিসওয়ারকে শনাক্ত করা খুবই দুরূহ, তবে জনগণ তাঁকে আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন একজন মহান দরবেশ বলে ভক্তি শ্রদ্ধা করে আসছে।
১০৯৬ হিজরিতে (১৬৮৫ খ্রি) আওরঙ্গজেবের শাসনামলে সৈয়দ মুহম্মদ তাহির, সৈয়দ আব্দুর রহমান এবং সৈয়দ মুহম্মদ রেজা নামক তিন ব্যক্তির নামে এক সনদ জারি করা হয়। এই সনদ বলে তাঁরা স্থায়িভাবে দরগাহ সংলগ্ন লাখেরাজ ভূমি (রাজস্ব-মুক্ত জমি) ভোগ-দখলের অধিকার পান। সনদে কুকুলতাশ মুজাফ্ফর জঙের সিলমোহর অঙ্কিত আছে এবং এটি সরকার বাজুহার অন্তর্গত সিলবারী পরগনার মুৎসদ্দি, চৌধুরী, কানুনগো প্রভৃতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট নির্দেশ হিসেবে পাঠান হয়। দলিলের মালিকরা যাতে দরবেশের লাখেরাজ সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কর্ম-কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সনদে পূর্ববর্তী শাসকদের প্রদত্ত অনুরূপ সনদ ওফরমানের উল্লেখ আছে। অতএব দরগাহটি বেশ পুরানো, তবে কত পুরানো তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না, কারণ পূর্ববর্তী সনদ ও ফরমান পাওয়া যায় নি। স্থানীয় লোকজন শাহসুলতান মাহিসওয়ারকে খুব শ্রদ্ধা করে। প্রতিদিন বহু লোক শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর দরগাহ দর্শনে আসে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
ঢাকা-রংপুর রোডে মহাস্থান বাস স্ট্যান্ডের পশ্চিমে শিবগঞ্জ উপজেলা সদর রোডে প্রচলিত যে কোনো যানবাহনে এখানে পৌঁছানো যাবে।