১৮৫৮ সালে নীলবিদ্রোহের অগ্নি দেশময় ছড়িয়ে পড়লেও নীলচাষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছিল অনেক আগ থেকেই। ১৮১০ সাল থেকেই নীলচাষের বিরুদ্ধে প্রজা সাধারণ সংগঠিত হতে থাকে।
নীলকরদের অন্যায় অত্যাচার ছাড়াও জাত যাওয়ার মানসিকতায় তার সাহেবদের ভালো চোখে দেখত না। এ সময় পাদ্রীরা ব্যাপক হারে হিন্দু, মুসলমান উভয়ের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে খ্রিস্টান বানাতে থাকে। কথা উঠল, ‘জমির শত্রু নীল, কাজের শূল ঢিল, আর জাতীয় শত্রু পাদ্রী হীল।’ সে সময় থেকেই প্রজাগণ নীলকরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতেন। কিন্তু সরকার গোলমাল মেটাবার জন্য তেমন ব্যবস্থা করতেন না। ১৮৩০ অব্দে প্রজাদের পক্ষে এক চুক্তিনামার আইন পাস (Regulation V of 1830). হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পর বেন্টিক এ আইন তুলে নেন। এছাড়াও নীল প্রধান জেলায় তৎকালীন বাংলার প্রথম বড়লাট হ্যালিডে সহকারী নীলকর ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করতে লাগলেন। জনগণ ভাবতে আরম্ভ করল বুঝি সরকারই নীলের অংশীদার। নীলকরেরাও এই সুযোগ বুঝে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। প্রজার ধানের জমি, আখের জমি, খেজুরের বন কেটে এবং বিদ্রোহী প্রজার ঘর ভেঙ্গে ভিটের উপর নীল চাষ করতে বাধ্য করল। ‘ভিটের ঘুঘু চড়ান’ প্রবাদটি এখান থেকেই এসেছে। আজও কুষ্টিয়া রাজবাড়ির মানুষ একটুতে একটু কিছু হলেই বলে, তোর ভিটেয় ঘুঘু চড়াব। তখন রাজবাড়ির পার্শ্ববর্তী জেলা পাবনা নীলচাষের আওতা বহির্ভুত ছিল বা ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনার মতো ব্যাপক নীলচাষ হত না। তারা নীলকরদের অত্যাচারের আওতামুক্ত থেকে সুখে ছিল। রাজবাড়ির মানুষ বলত, যে যায় পাবনা তার নেই ভাবনা।
এ প্রবাদটি আজও কুষ্টিয়া রাজবাড়ির মানুষের মুখের বুলি। প্রজা প্রহারের জন্য তারা এক প্রকার মুণ্ডর তৈরি করেছিল যাকে বলা হত -----শ্যামচাঁদ। ওই শ্যামচাঁদের আঘাতে প্রজারা জর্জরিত হতেন। কুঠির লোকেরা প্রচার করছিল যে, প্রজাদের শাস্তির জন্য সরকার অচিরেই ‘মুণ্ডরের আইন’ পাশ করতে যাচ্ছে। মুণ্ডরের আইন আর শ্যামচাঁদের ভয়ে প্রজারা থরহরি কম্পমান থাকতেন। কিছু কিছু বিদ্রোহী প্রজা নীল বুনতে অস্বীকার করলে ক্রোধান্বিত কুঠিয়ালরা পাখির মতো গুলি করে মারত। ধীরে ধীরে প্রজারা ক্রোধান্বিত হয়ে উঠতে লাগল। তারা প্রতিজ্ঞা করল জীবন গেলেও তারা নীলচাষ করবে না। ১৮৫৮ সালে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো ফরিদপুর, রাজবাড়ি, যশোর, কুষ্টিয়ায়। দেখা দিল ‘সংঘবদ্ধ বিদ্রোহ’ যা ইতিহাসে ‘নীলবিদ্রোহ’ বলে পরিচিত।
যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াই নীলচাষের প্রধান ক্ষেত্র বলে বিবেচিত। যশোরের চৌগাছার বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রথম নীলবিদ্রোহ শুরু হয়। পরে তা সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৫৮ সালে শত শত নারী পুরুষ সংঘবদ্ধভাবে নীলচাষের বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে। ১৮৫৯ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এই বিদ্রোহ যশোর, কুষ্টিয়া, নদীয়া, ফরিদপুর, ব্যাপককার ধারণ করে। নেতৃত্ব দেন চৌগাছার বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, পলু মাগুরার শিশির কুমার ঘোষ, সাধুহাটির জমিদার মথুরানাথ আচার্য, শরিয়তপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহর ছেলে পীর দুদু মিয়া, রাজবাড়ির সোনাপুরের কৃষক হাশেম আলী, পাংশার জমিদার ভৈরব নাথ প্রমুখ। যশোরের চৌবাড়িয়ার নীলদর্পণ প্রণেতা দীনবন্ধু মিত্র, কলিকাতার হিন্দু প্যাট্রিয়ট সম্পাদক হরিশচন্দ্র মজুমদার, কুমারখালির কাঙ্গাল হরিনাথ, সুসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, পাংশার রওশন আলী চৌধুরী খোন্দকার নজীর হোসেন লেখনীর মাধ্যমে বিদ্রোহীকে অগ্নিরুপ ধারণ করতে সাহায্য করেন।
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে আশ্বিন মাসে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। এ নাটকে নীলকরপীড়িত বাংলাদেশের এক জীবন্ত চিত্র তুলে ধরা হয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই পুস্তক পাদবী লং সাহেবের তত্ত্বাবধানে কবিবর মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখনীর সাহায্যে ইংরেজিতে অনূদিত হলে নীলকর মহলে হুলুস্থল পড়ে গেল। নীলকররা লং এর বিরুদ্ধে মামলা করলে তার একমাস জেল এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা হল। কালীপ্রসন্ন সিংহ তৎক্ষাণাৎ কোর্টে এক হাজার টাকা জমা দিলেন। কিন্তু কারাদণ্ড মাফ হল না। কিন্ত প্রজার চোখে মহান হয়ে উঠলেন লং সাহেব। কবিরা গ্রাম্য সুরে গান রচনা করল-----‘নীলবাঁদের সোনার বাংলা করল এবার ছারে খার, অসময়ে হারিয়া মলো, লং এর হল কারগার-----প্রজার প্রাণ বাঁচা ভার।’ মহারানী ভিক্টোরিয়া ইংল্যান্ডে রাজ্যাসনে বসার পর ভারতের শাসন বিভাগে এক নবযুগের অবতারণা হয়েছিল। প্রসিদ্ধ গ্রান্ট মহোদয় (Sir, JP Grant) বাংলার বড়লাট এবং দয়ার সাগর বলে পরিচিত। লর্ড ক্যানিং ভারতের রাজ্য প্রতিনিধি হলেন। বস্তুত তাদের সহায়তাতেই এদেশে নীলকরের দৌরাত্ব হ্রাস পেয়েছিল। ১৭৯৩ সালে বর্তমান রাজবাড়ি জেলার অধিক অংশ ঘাট গোয়ালন্দকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তা থেকে রাজবাড়ি জেলাকে বাদ দেওয়ার অবকাশ নেই। তাই যশোরের পলু মাগুরার শিশির কুমার এবং শরীয়তপুরের পীর দুদু মিয়া, পাংশার ভৈরব নাথ, সোনাপুরের হাসেম আলীর ভূমিকা আলোচনা প্রয়োজন।
১৮৫৮ সালে শিশির কুমারের বয়স মাত্র ১৮ বছর। এ যুবক যে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে প্যাট্রিয়ট পত্রিকার জন্য প্রবন্ধ লিখতেন তাতে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের তাক লেগে যেত। যশোরের ম্যাজিট্র্রেট মেলোনী ও স্কীনার সাহেব তাঁকে ভয় দেখালেন কিন্ত লেখা থেকে বিরত করতে পারলেন না। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে নীলচাষের বিরুদ্ধে প্রজাদের সংগঠিত ও সাহসী করে তুলতেন। গ্রামের সীমানায় একস্থানে একটি ঢাক থাকত, নীলকরের সাহেবরা অত্যাচার করতে এলে কেহ ঢাক বাজিয়ে দিতেন। অমনি শত শত গ্রাম্য কৃষক লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ঘিরে ফেলত এবং তারা অক্ষত দেহে ফিরে যেতে পারত না। নীলকরের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতেই যেন শিশির বাবু ঈম্বর কর্তৃক প্রেরিত হয়েছিল। এই মনে করে হিন্দু কৃষকগণ তাঁকে দেবতার ন্যায় ভক্তি করত। মুসলমান কৃষকগণ তাঁর নামে সিন্নি দিত। তাকে ‘সিন্নিবাবু’ বলে সকলে সম্বোধন করত। তাঁর ডাকে হাজার হাজার কৃষক সমবেত হত।
নীলবিদ্রোহের কেন্দ্র বলে পরিচিত চৌগাছা, সিন্দুরিয়া, জোড়াদহ, নয়াহাটা, চুয়াডাঙ্গা ছাড়িয়ে গড়াই নদীর উত্তর পাড়ে রাজবাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল। মাদারীপুর, ফরিদপুরের বিভিন্ন অঞ্চলসহ রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি, জঙ্গল, সোনাপুর, মৃগী, পাংশা, সংগ্রামপুর, কুমারখালি অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। এ অঞ্চলে নীলবিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন শরিয়তপুরের পীর দুদু মিয়া, সোনাপুরের (বালিয়াকান্দি) হাসেম আলী, পাংশার ভৈরব বাবু প্রমুখ। পীর দুদু মিয়া জমিদারের বিরুদ্ধে দুর্দশাগ্রস্থ চাষীদের ভীষণভাবে ক্ষেপিয়ে তোলেন।
১৮৬৮ সালে ৩ সেপ্টেম্বর অমৃতবাজার পত্রিকায় দুদুমিয়ার শক্তির কিছু পরিচয় পাওয়া যায়, লেখা হয়-----‘কালে তার প্রভাব এতদূর বৃদ্ধি পায় যে কুঠিয়াল ইংরেজ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে তিনি মনে করলে ৫০ হাজার লোক সংগ্রহ করতে পারতেন। সোনাপুরের হাসেম আলীর নেতৃত্বে শত শত চাষী সংঘবদ্ধ হয়। সোনাপুর, বহরপুর, বালিয়াকান্দি, বসন্তপুরসহ অনেক নীলকুঠিতে তাঁর নেতৃত্বে আগুন দেওয়া হয়।’ সে সময় পাংশার জমিদার ভৈরব বাবু নীলচাষের বিরুদ্ধে পাংশায় নেতৃত্ব দেন। ভৈরব বাবু ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও ডাকসাইটে জমিদার। নীলকরদের বিরুদ্ধে তিনি সক্রিয় গণবিদ্রোহের সূচনা করেন। তিনি পার্শ্ববর্তী কুঠি আক্রমণ করে বিপুল ধবংস সাধন করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে টিআই ক্যানী ভৈরবনাথের ট্রেজারী লুট করে। ভৈরব বাবু পাবনা আদালতে ট্রেজারী লুটের মামলা করেন। এ মামলায় তিনি ১৪ হাজার টাকা ডিক্রী লাভ করেন। এর কিছুক্ষণ পর ক্যানীর লোকজন তাকে অপহরণ করে নিহত করেন। (পাংশা উপজেলার ইতিহাস, শেখ মুহাম্মদ সবুর উদ্দিন, পৃষ্ঠা-৩, ৪)। বেলগাছি অদূরে একটি গ্রামের নাম সংগ্রামপুর। ঐ গ্রামের মানুষেরা নীলচাষের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ায় এর নাম হয় সংগ্রামপুর। সংগ্রামপুর আজও নীলবিদ্রোহের ইতিহাস বহন করছে। জঙ্গল ইউনিয়নে ঠাঠাপড়ার ভিটার বিষয়ে বলা হয়েছে।
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীলবিদ্রোহ গুরুতর আকার ধারণ করল। লর্ড ক্যানিং এ সংবাদে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন। এ ব্যাপারে তিনি বাংলার বড়লাট গ্রান্ট সাহেবের পরিদর্শনের ভার দেন। ঐ বছর তিনি গড়াই, কুমার, কালীগঙ্গার নদীপথে ৭০ থেকে ৮০ মাইল স্টিমার যোগে পরিদর্শন করেন। প্রায় ১৪ ঘন্টা ব্যাপী এ ভ্রমণ চলে। নদীর উভয় কূলে হাজার হাজার কৃষক শ্রেণিবদ্ধভাবে জমায়েত হয়ে ফরিয়াদ জানায়। কথিত আছে গড়াই নদীর কূল দিয়ে যাওয়ার সময় রাজবাড়ি জেলার হাজার হাজার কৃষক দুদুমিয়া ও হাশেম আলীর নেতৃত্বে কামারখালি ঘাট থেকে সমাধিনগর, নাড়ুয়া মুখে সমবেত হয়। নদীর ধারে হাজার হাজার কৃষক হাতে দরখাস্ত নিয়ে ক্যাপ্টেনকে ঘাটে জাহাজ ভিড়াতে অনুরোধ করতে লাগল। কিন্তু ক্যাপ্টেন কোনো মতে জাহাজ ঘাটে ভিড়ান না। এতে প্রজারা প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার উদ্দেশ্যে খরস্রোতা গড়াই নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ভেসে যেতে লাগল। গ্রান্ট সাহেব এ দৃশ্য দেখে জাহাজ ঘাটে ভিড়াতে আদেশ দিলেন। প্রজারা জাহাজ ঘিরে ফেলল এবং গ্রান্ট সাহেবকে প্রতিজ্ঞা করাল যে তিনি প্রজাদের রক্ষা করবেন।
এরপর থেকে পাঁচজন সদস্য নিয়ে ‘ইন্ডিগো কমিশন’ গঠিত হয়। পরবর্তী ডিসেম্বর মাসে গ্রান্ট মহোদয় সুদীর্ঘ মন্তব্য করেন----বাংলার প্রজা ক্রীতদাস নহেন। প্রকৃতপক্ষে জমির স্বত্ত্বাধিকারী। তাহাদের পক্ষে এরুপ ক্ষতির বিরোধী হওয়া বিস্ময়কর। যাহা ক্ষতিজনক তাহা করাইতে গেলে অত্যাচার অবশ্যম্ভবী। এই অত্যাচারের আতিশস্যাই নীল বপনে প্রজার আপত্তির মূখ্য কারণ----(হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ লিখিত নীলদর্পণের ভূমিকা, কর মজুমদার সং-১ পৃ) কমিশন নিম্নলিখিত সুপারিশ এবং তদ্বারা ইশতেহার জারী করা হয়-(১) সরকার নীলচাষের পক্ষে বা বিপক্ষে নহেন (২) অন্য চাষের মতো নীলচাষ করা বা না করা সম্পূর্ণরুপে প্রজার ইচ্ছাধীন (৩) আইন অমান্য করে অত্যাচার বা অশান্তির কারণ হলে নীলকর বা প্রজা কেউই কঠোর শাস্তি হতে নিস্তার পাবেন না।
কমিশনের ইশতেহার প্রকাশের পর নীলচাষ প্রজার ইচ্ছাধীন হলেও নীলের ব্যবসা ও উৎপাদন বন্ধ হল না। তবে নীলচাষ ক্রমে ক্রমে হ্রাস পেতে থাকল। অনেক স্থানের কুঠি বন্ধ হলেও রাজবাড়ি অঞ্চলের নীলের চাষ চলতেই থাকে। এ সময় টমাস কেনীর অত্যাচারও যেন বেড়ে যায়। এ অঞ্চলের প্রজারা আরো বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে মীর মশাররফ হোসেনের আমার জীবনী গ্রন্থে ১১০ পৃষ্ঠায় -----‘নীলচাষের দৌরাত্ব সহ্য করিতে না পারিয়া সর্বসাধারণ প্রজা আবার নীলবিদ্রোহী হইয়াছেন। মীর সাহেব আলী বিদ্রোহের সময় প্রজার দলে মিশিয়াছেন। প্রজাসাধারণ এত ক্ষেপে উঠলো যে কি কৌশলে টমাস কেনীর প্রাণ হরণ করবেন, মিসেস কেনীর সর্বনাশ করবেন, কী কৌশলে সালঘর মধুয়ার কুঠি ভাঙ্গিয়া কালীগঙ্গায় নিক্ষেপ করবেন।’ সতীশ চন্দ্র মিত্র লিখেছেন নীলের দ্বিতীয় বিদ্রোহ শুরু ১৮৮৯ সালে। ডম্বল সাহেবের অত্যাচারে এ বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ বিদ্রোহ মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ি সীমাবদ্ধ ছিল। এ সময় পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রজারা নীলচাষে একেবারেই অসম্মতি জানায়। ফলে নীলকরেরা নীলের দাম বৃদ্ধি করে নীলচাষ করতে চায় কিন্তু তারা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। এরই মধ্যে জার্মান থেকে কৃত্রিম কৌশলে উৎপাদিত নীল সস্তা দামে দেশে দেশে আমদানী হওয়ায় নীলের চাষ ও ব্যবসা ১৮৯৫ সালের মধ্যে একেবারে উঠে গেল।
ইংরেজ শাসনকালে এ দেশে নীলচাষ, নীলবিদ্রোহ, নীলকরদের অন্যায় অত্যাচার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। শত বছরেরও অধিক কাল পূর্বে তা শেষ হয়েছে। তারপরও এদেশের মানুষকে ইংরেজ-পাকিস্তানি ও স্বজাতীয়দের দ্বারা কত দুঃখ যন্ত্রণাই না ভোগ করতে হয়েছে। ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যায়, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। এখনো দেশে প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ দারিদ্রপিড়ীত। রাজনৈতিক সহিংসতা মনে শঙ্কা জাগায়। সন্ত্রাস, দুর্নীতি উন্নয়নকে ব্যবহ করছে। এতদ্বসত্ত্বেও বাংলাদেশ একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দ্রুত বিশ্বায়নের পথে সতর্ক সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে। বাড়ছে মাথাপিছু আয়, বাড়ছে প্রযু্ক্তি, বাড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। বাংলাদেশের মানুষের বিগত দুই শত বছরের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এ জাতি শত প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে স্বাধীকার, স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ও আত্মবিকাশের পথে নিরন্তর চালনা করছে। এ ধারা অব্যাহত থাক, শত বছর পরের ইতিহাস পাঠক এ সংবাদ পাঠ করবে----এ প্রত্যাশায়।