বাউল আব্দুর রব ফকির ওরফে গোপাল শাহ্, কালো রংয়ের খর্বকায় রব ফকির গলায় দোতারা ঝুলিয়ে অপূর্ব ভঙ্গিমায় গান করেন, তাঁর ভাষায় –
সল্পভাষী রবের বয়স ছিল প্রায় ৭৫। তাঁর বাবা সাধুগুরুদের ভালোবাসতেন, ছোট বেলায় বাবার সাইকেলে চড়ে রব লালনের আখড়ায় যেতেন। সেখানেই ওস্তাদের সাথে পরিচয় ভাব বিনিময়। রব ফকির শেষ বয়সেও সাদা পাঞ্চাবি গায়ে সাইকেল চালিয়ে আঁখরাবাড়ীতে আসতেন, পিঠে ঝুলানো থাকে সালু কাপড়ে মোড়ানো দোতারা।
যেমন ছিল তাঁর কণ্ঠ, আরো মধুর হয়ে উঠত তাঁর দোতারার শব্দ। তিনি যখন দোতারা বাজাতেন, অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতেন শ্রোতারা। তাঁর গান মানুষের মনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে দিত।
ওস্তাদ আব্দুর রহিম বয়াতির প্রতি গুরু ভক্তি অপরিসীম। কিশোর রব বাবার পকেট থেকে লুকিয়ে পয়সা নিয়ে গানের পিছনে ব্যয় করতেন। তাঁর বাবার মতোই সেও কুষ্টিয়ার জগতি চিনির মিলে সামান্য চাকুরী করতেন। রব যার কাছে দীক্ষা নেন তাঁর নামও রব ফকির পুরো নাম আব্দুর রব ফকির, যিনি বয়সে প্রবীণ, খলিসাকুন্ডিতে তাঁর একটি নিজস্ব আস্তানা আছে। রাশ ভারি স্বভাবের এই গুরু তাঁর ইচ্ছামতোই তৈরি করেছেন তাঁর শিষ্যকে।
লালনের তত্ত্বজ্ঞান, নিগুর কথা তিনি তাঁর কাছ থেকেই শ্রবণ করেন। রব ফকির দেশের সর্বত্র গান করে বেড়াতেন, এছাড়া ভারত, নেপাল, লন্ডন, শ্রীলংকা, সিংগাপুর, আমেরিকাসহ বিদেশের বহু অঞ্চলে গান করেছেন বহুবার। আনুশেহ, শাহানাজ বেলীসহ অনেককেই গান শিখিয়েছেন হাতেকলমে।
লালনের পথে কেন আছেন ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন –
“থাকতে হয় সেই পথ ধরে” - তাই আছি।
অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বাংলাঃ ২৩শে শ্রাবণ ১৪২৩, ইংরেজীঃ ৭ই আগস্ট ২০১৬ রবিবার রাত ১টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কুষ্টিয়া মজমপুর বাড়াদী নিজ বাসভবনে সমাধি করা হয়। তিনি বেশ কিছু দিন অসুস্থায় ভুগতেছিলেন।