বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী – জনাব রাহাতুল্লাহ সরকার
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী – জনাব রাহাতুল্লাহ সরকার

১৮৯৮ সালে তৎকালীন নদীয়া বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার ফিলিপনগর ইসলামপুর গ্রামে সভ্রান্ত সরকার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা জনাব জহির উদ্দিন সরকার, মাতা মোছাঃ রবেজান। তিনি এলাকার একজন ধার্মিক জনহিতশ্রী ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

বাল্যকাল থেকেই জনাব রাহাতুল্লাহ সরকার মেধাবী ছিলেন। শৈশবে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা আরম্ভ হয়। পরবর্তী কালে স্থানীয় জুনিয়াদহ হাই স্কুল থেকে তিনি ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন। এর পর তিনি ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজশাহী গভঃ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। চিরকাল স্বধীনচেতা ও ঔপনিবেসিক শাসন বিরোধী জনাব রাহাতুল্লাহ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আধীনে সরকারী চাকুরী গ্রহন না করে সংস্থাকে সোরাবজী গ্রুপে ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। এই সংস্থায় চাকুরীকালেই তিনি রাজনীতি এবং সমাজ সেবামূলক কাজে অংশ গ্রহন শুরু করেন।

তার সেবামূলক কাজ সমূহের অন্যতম হচ্ছে ১৯২৫ সালে দিনাজপুর সদর মহকুমা হাকিম খান কলিমুদ্দিনের সহযোগীতায় দিনাজপুর জেলার তৎকালীন ম্যজিস্ট্রেট মিঃ দে আই সি এর নামে পার্বতীপুর সেবামূলক কাজ করেন। এছাড়া তিনি এন,এন গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠায়ও সহযোগিতা প্রদান করেন। তিনি পার্বতীপুর ডিগ্রী কলেজ স্থাপনেও অবদান রেখেছেন। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গঠন ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গঠনেও পূর্ণ সহযোগীতা করেছেন। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান সুমহের মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা,অন্যতম । পার্বতীপুরের নতুন বাজারের দুটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা তার কর্মের উজ্জ্বল স্বাক্ষর । চিরকাল অসাম্প্রদায়িক জনাব রাহাতুল্লা সরকার অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের মন্দির, শশ্মান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।

পার্বতীপুরের এককালীন শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান মিলন মন্দিরের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ত্রিশ দশকে তিনি শেরে বাংলা এ,কে এম ফজলুল হকের আহবানে সক্রিয় রাজনীতি জড়িয়ে পড়েন। শেরে বাংলার নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নির্যাতিত নিপীড়িত দরীদ্র মানুষের সাথী জনাব রাহাতুল্লাহ সরকার ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য হিসেবে প্রজাস্বত্ব আইন ও ঋণ শালিশী বোর্ড প্রবর্তনেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বাংলায় পঞ্চাশের মনন্তরের সময় লংগর খানা স্থাপন করে মৃত্যুপথযাত্রী অনাহারক্লিষ্ট জনগণের পাশে দাড়ান। ধর্মপ্রাণ কিন্তু অসম্প্রদায়িক,মুক্ত মনের অধিকারী জনাব রাহাতুল্লাহ সরকার ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পার্বতীপুর দাঙ্গা বিরধী কমিটি গঠন করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পার্বতীপুর কখনও সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তি কালে জনাব রাহাতুল্লাহ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বসু ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বে মুক্ত বাংলা গঠনের পক্ষে অসামন্য প্রচেষ্টা চালান। দেশ বিভাগের পর জনাব রাহাউল্লাহ তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকের কোপানলে পতিত হন। এজন্য তাকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন ভোগ করতে হয়।

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ববাংলায় শেরেবাংলা, মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে স্বৈরাচারী মুসলিম লীগ বিরধী যুক্ত ফন্ট গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন । কৃষক শ্রমিক পার্টির প্রতিনিধী হিসেবে যুক্ত ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পূর্ববঙ্গ থেকে সবচেয়ে বেশী ভোটে জয় লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে শেরেবাংলার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ সরকার বাতিল করে ৯২ ক ধারা প্রত্যাহার হলে জনাব আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং তিনি ঐ মন্ত্রী সভায় বাণিজ্য শ্রম শিল্প মন্ত্রনালয়ের পার্লামেন্ট সেক্রেটারী নিযুক্ত হন।

১৯৫৮ সালে আইযুব খান সামরিক শাসন জারি করলে জনাব রাহাতুল্লাহ সামরিক শাসনের প্রতিবাদ করেন ফলে তাকে নির্যাতিত হতে হয়। ১৯৬৯ সালে স্বৈরাচার বিরধী আন্দলনে তিনি নেতৃত্বে প্রদান করেন। ১৯৭০ সালে নির্বাচন কালে তিনি স্বাধীনতার পক্ষের দলকে তিনি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। ফলে তার “পার্বতী” বাসগৃহ হানাদার বাহিনী অগ্নী সংযোগ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি পার্বতীপুরে ফিরে এসে যুদ্ধ বিধস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৮২ সালে ১৮ই অক্টোবর জনাব রাহাতুল্লাহ সরকার ৮৪ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত কারনে পরলোক গমন করেন।

রাহাতুল্লাহ সরকারের দুই ভাই, এক বোন, আহাদ আলী সরকারের দুই পুত্র, ছয় কন্যা রাহাতুল্লাহ সরকারের ৮ ছেলে ২ মেয়ে তারা হলেনঃ-

  • ১। নুরুল মজিদ চীপ ইন্সপেক্টর জুট। কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে সমাহিত, তার এক পুত্র।
  • ২। আঃ রশিদ একজন সফল ব্যবসায়ী , তার চার কন্যা ও এক পুত্র।
  • ৩। আঃ রাবী এফ, আর, সি, এস ডাক্তার, লন্ডনে বসবাস করেন, তার দুই কন্যা।
  • ৪। আব্দুল খালেক, ব্যবসায়ী তার তিন কন্যা ও এক পুত্র।
  • ৫। আব্দুল হামিদ , ডাইরেক্টর ইনভারমেন্টপলুশন কনট্রোল ।
  • ৬। আঃ জলিল এম এ, বি এ (অনার্স) এল এল বি, ডিসি ট্যাক্সেস, চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা, মেম্বার রাজস্ব বোর্ড, তার দুই পুত্র।
  • ৭। ফিরোজ কবির মুকুল এম এ, বি এ (অনার্স) এ্যাডিশনাল ডি আই জি (অবঃ) পুলিশ, তার এক পুত্র।
  • ৮। এহসানুল করিম, তার এক কন্যা। মেয়ে (১) হাসিনা ইসলাম (৩) ফিরোজ বেগম।

এনায়েতুল্লাহ সরকার, মফিজুদ্দিন সরকার এদের পূর্বের আট পুরুষ ।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হবার পর তিনি সংসদে কুষ্টিয়ার সমস্যার কথা তুলে ধরে এবং তার অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি পার্লামেন্টে বলেন, সদ্য মহকুমা থেকে জেলায় রুপান্তরিত কুষ্টিয়া জেলায় সুচিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতাল নেই। ছাত্র- ছাত্রীর লেখাপড়ার জন্য কোন সরকারী হাই স্কুল নেই, পুলিশ লাইন, কোর্ট বিল্ডিং নেই, সার্কিট হাউজ নেই। তিনি উক্ত দাবী গুল বাস্তবায়নে কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহন করেন। পূর্বে কুষ্টিয়া – প্রাগপুর পর্যন্ত কোন রাস্তা ছিল না। কুষ্টিয়া থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত রাস্তা ছিল। তিনি পার্লামেন্টে প্রাগপুর থেকে ভেড়ামাড়া পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মানের প্রস্তাব করেন এবং অর্থ বরার্দ্দ করেন। কুষ্টিয়া শহরকে রক্ষার জন্য বাঁধের প্রস্তাব মন্ত্রনালয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করান। জনাব রাহাত উল্লাহ সরকার জুনিয়াদহ হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ঐ স্কুলের উন্নযনের জন্য বড় অংকের টাকা অনুদান দেন। তিনি ফিলিপনগর মাদ্রাসাকে হাই স্কুলে পরিণত করেন। জনগণের সুবিধার্থে নিজ জায়গায় হাট বাজার স্থাপন করেন। নিজ বাড়ির পাশে নিজ অর্থায়নে পাকা মসজিদ নির্মান করেন। এই অঞ্চলে ঐ সময় ঐটিই পাকা মসজিদ। মথরাপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন করেন। ক্ষমতাই থাকা কালিন সময় নিজ এলাকায় বহুলোককে চাকুরি পাইয়ে দেন।

জনাব রাহাতুল্লাহ সরকারের পুত্র এ. এইচ. এম. ফিরোজ কবির মুকুল মুক্তিযুদ্ধাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর আহবানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং ২ নং সেক্টরে খালেদ মোশারফের অধীনে বহুযুদ্ধ করেছেন। তিনি বিসিএস প্রথম ব্যাচে উত্তীর্ন হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তার এক মাত্র পুত্র আবুরাহাত মরশেদ কবির সুদিপ্ত লন্ডনে ‘বার এট ল’ এর শেষ বর্ষের ছাত্র।

নুরুল মজিদের পুত্র খুরশিদ আনোয়ার বাংলাদেশ সরকারের উপ-সচিব হিসেবে চাকুরিতে আছেন এবং ডেইলি স্টার ও নিউ এজে লিখে থাকেন।

মরহুম হাসিনা প্রথমা কন্যা পি,এইচ,ডি ডিগ্রীধারি অন্য তিন কন্যা মাস্টারর্স। ডাঃ. এম. এ. বারীর প্রথমা কন্যা এফ.আর.সি.এস. এবং দ্বিতীয় কন্যা ফার্মাসিস্ট মাস্টারর্স।আব্দুল হামিদের পুত্র রুবাইত রাহাত এম.বি. ব্যাংকর একজন বড় কর্মকর্তা, অন্য জন আধ্যায়নরত।

আব্দুল জলিলের দুই কন্যা কুমকুম জলিল, এম.বি.এ ব্যাংক উচ্চ পদে কর্মকর্তা ।দ্বিতীয় কন্যা ডাক্টারিতে আধ্যায়নরত।

চিনি উল্লাহ সরকারের পুত্র ডাঃ তৈয়ব উদ্দিন সরকার এক নাগাড়ে ত্রিশ বৎসর ফিলিপনগর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রাইটা থেকে মহিষকুন্ডি পর্যন্ত তার দুর্দান্ত প্রতাপ প্রতিপত্তিছিলো। এই অঞ্চলের সমস্ত সালিশ বিচার তিনিই করতেন এবং সবাই তা মেনে নিতেন। আঃ সাত্তার সরকারের চারটি পুত্র, সাজাত সরকার, রেজাউল হক সরকার (শিক্ষক), আলতাব সরকার( শিক্ষক), সিরাজুল ইসলাম ( সহকারি ডিসি ফুড) । রেজাউল হক সরকারের তিন পুত্র, প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, ডাইরেক্টর বিল্ড ট্রেড, আবু জাফর সরকার চিফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর, বিল্ড ট্রেড, জামিল হোসেন সরকার, চিফ এ্যাকাউন্ট অফিসার, বিল্ড ট্রেড। জাকির হোসেন সরকারের পুত্র, সরকার খালিদ বিন জাকির, সরকার আবু জাফরের পুত্র , সরকার আবু আরাফাত ও সরকার আব্রা , জামিল হোসেন সরকারের পুত্র জিশান ।

এনায়েত উল্লাহ সরকারের দুই পুত্র মফিজ উদ্দিন সরকার ও কলিম উদ্দিন সরকার । কলিম উদ্দিন সরকারের পুত্র নজরুল ইসলাম সরকার সততার সাথে এ.জি. এস.এ.এস অফিসার পদে চাকুরীরত ছিলেন। বর্তমানে আইন পেশায় নিয়োজিত। তার জৈষ্ঠ পুত্র সরকার জাহির মোঃ ফিরোজ একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার এবং কনিষ্ঠ পুত্র সরকার জাহিরুল ইসলাম জামির একজন এনজিও কো- অর্ডিনেটিং অফিসার।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন