প্রফেসর বিবুভেন্দ্র সরকার ( বি, সরকার) জন্ম কুষ্টিয়া জেলায়। আদি বাড়ী ছিলো কুমারখালীর গোবরা চাঁদপুর গ্রামে। কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনের পেছনে বর্তমানে হোটেল আরাফাত ছিলো তার বাবার বাড়ি। শিশুকালে এ বাড়িতেই তার জন্ম। শিক্ষার হাতেখড়ি মিশন স্কুলে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তার পরিবার ভারতে চলে যায় এবং সেখানেই তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেন। ভারতে তিনি একের পর এক মেধার সাক্ষর রেখে বিভিন্ন স্কলারশিপ ও পুরুস্কার জিতে নেন। ১৯৫৯ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারত ত্যাগ করে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। ১৯৬৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তিনি বায়োকেমিস্ট্রিতে পি,এইচ,ডি ডিগ্রী লাভ করেন।মেধার বিশেষ সাক্ষরের জন্য তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ' Blue key' এওয়ার্ডস অর্জন করেন।
মাত্র ২৮ বছর বয়সে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটি এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিশু হসপিটাল ফর সিক চিলড্রেনের নিজস্ব তহবিল বৃদ্ধির জন্য বিরাট সহায়ক ভুমিকা পালন করেন। অতিদ্রুত তিনি অধ্যাপকের পদ লাভ করেন। তিনি দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ হসপিটাল ফর সিক চিলড্রেনের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রফেসর সরকার ফ্রান্সের প্যারিস ইউনিভার্সিটি, ইংল্যান্ড ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি, কানাডার মেনিটোবা ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ফুদান, দিল্লী, সাংহাই, আয়োনিয়া ইন গ্রীস ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করেন। ইংল্যান্ডে তাকে মেম্বার অব হাই টেবিল ইন কিংস কলেজ ক্যামব্রিজ পদে ভুষিত করা হয়।
১৯৭৭ সালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে নাজিল্ড ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড অব ইংল্যান্ড পান। ১৯৯৮ সালে তিনি এডভান্স প্রোটিন সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন এবং কানাডাতে একটি উচ্চমানের বায়োটেকনোলজি সেন্টার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
১৯৯৬ সালে কলকাতায় একটি Scientific conference এ এসে বাংলাদেশের আর্সেনিক আক্রান্ত বিষয়টি উনি জানতে পারেন। তাৎক্ষণিক ভাবে তিনি তার প্রোগ্রাম পরিবর্তন করে সরাসরি বাংলাদেশে আসেন। প্রায় ৫০ বছর পর এই ছিলো তার জন্মভূমি তথা কুষ্টিয়াতে ফেরা।
তিনি কুষ্টিয়া জেলায় এসে খুজে ফিরেছেন তার বাড়িঘর, ছোট বেলার স্মৃতি, তার নিজের স্কুল মিশন স্কুলে গিয়েছেন। গিয়েছেন গ্রামে গঞ্জে আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষের পাশে। গ্রাম বাংলার দারিদ্র জর্জরিত মানুষের উপর অভিশাপের মতো নেমে আশা আর্সেনিকের ভয়াবহতা তাকে ভীষন ভাবিয়ে তোলে। তিনি কানাডাতে ফিরে গিয়ে এই বিষয়ে পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে ব্যাপক আলোচনা করেন, জনমত সৃষ্টি করেন এবং তার প্রেক্ষিতে আর্সেনিক আক্রান্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
এরপর তিনি আন্তর্জাতিক একটি গবেষক দল গঠন করেন এবিং তার নেতৃত্তে শুধু আর্সেনিক নয় মোট ২৯ টি মেটাল / ধাতুর উপস্থিতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাপ তৈরি করেন, যার মাধ্যমে আক্রান্ত বিশেষ এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। মারাত্মক আক্রান্ত এলাকা গুলির মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়ারও অবস্থান।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, এই সুবিশাল কাজ যাতে কিনা মিলিয়ন ডলার খরচের সম্ভবনা ছিল ড. সরকার এবং তার International Scientist team সম্পুর্ন নিজ খরচে সুসম্পন্ন করেন। বাংলাদেশের জন্য এটি তাদের ছিলো একটি বিরাট ত্যাগ। ড.সরকার কিশোর বয়স থেকে পশ্চিমা সুবিধাদির মধ্যে বেড়ে উঠলেও বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে পথে মাঠে ধুলো কাদার মধ্যে কাজ শুরু করেন। কখনও পায়ে হেটে কখনও ভ্যানে চড়ে বৈজ্ঞানিক কর্মচালিয়ে যেতে তার একটুও কষ্ট হয়নি, হয়নি কোন দিধা। তার অন্তরে আছে বাংলাদেশ, আছে তার নিজের জন্মস্থান কুষ্টিয়া। তিনি মনে প্রানে কুষ্টিয়ার সন্তান।
তার বিশাল কর্মজীবনে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষনা Wilson's disease and Menki's disease এর চিকিৎসা আবিষ্কর্তা তিনি। সেই সুবাদে তার গবেষনা পাঠের জন্য ১৯৮২ সালে তাকে সুইডেনের নোবেল সিমপোজিয়ামে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। আলফ্রেড নোবেলের কীর্তমান বাসভবনে বক্তব্য দিতে দাড়িয়ে তিনি ভেবেছিলেন আমি কুষ্টিয়ার ছেলে আজ কোথায় কতদুর উঠে এসেছি, কিভাবে এটা হলো ? সাহিত্য এবং সংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়াকে যিনি নতুন ভাবে অলংকৃত করেছেন। কুষ্টিয়ার সন্তান, কুষ্টিয়ার ধুলো -বালি যার গায়ে সেই তিনি বিশ্বব্যাপী এক বরেন্য বৈজ্ঞানিক সারা বিশ্ব জুড়ে তার আছে ৬০ এর অধিক পোষ্ট ডক্টরেট সাইন্টিস্ট। যাদেরকে তিনি তৈরী করেছেন নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে।
এবার ২০০৭ এর প্রথমে তিনি কুষ্টিয়াতে এসেছিলেন কিছুটা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আর কিছুটা আর্সেনিক আক্রান্ত মায়েদের দেখতে। ইনফ্যাক্ট ২০০৭ মে মাসে থার্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন মেটালস এন্ড জেনেটিক্স অনুষ্ঠিত হলো টরেন্টোতে যা কিনা তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত ছিলো। তার দুটি সন্তান পল ও উমা। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে সরকার পত্নি স্বর্গগত হন। সেই থেকে বাচ্চাদের মা এবং বাবা উভয়ের দায়িত্ব পালনকরেন তিনি। বর্তমানে পল ইঞ্জিনিয়ার, উমা U.N এ Coordinator of Asia & Pacific about child mabour & education পদে কর্মরত আছে।
সৃষ্টিকর্তা যাকে ভালবাসেন তার হাতে সৃষ্টির সেবা হয়। প্রফেসর সরকার সকল গুনে গুনান্নিত এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। ছবি আঁকা,গান গাওয়া, পিয়ানো বাজানো থেকে শুরু করে কি না জানেন তিনি। আর তার আছে এক বিশাল ভীষন কমল দরদি হৃদয়। ইমোশনের দিক থেকে ১০০ ভাগ বাঙ্গালীপনা। প্রফেসরের বাবা ছিলেন একজন ল ইয়ার, ভীষন সাহিত্যমনা, সুশিক্ষিত এবং রুচিশীল মানুষ ছিলেন তিনি। মা ছিলেন স্বাধীনচেতা বীরাঙ্গনা এক মেয়ে, স্বর্গীয় সুচেতা সরকার। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া মিশন স্কুলের সামনের রাস্তায় শুয়ে পড়ে অবাক করেছিলেন সবাইকে। প্রহৃত হয়েছিলেন ব্রিটিশ পেটুয়া বাহিনী দ্বারা।
বিশ্ব নন্দিত রবী ঠাকুরের প্রায়শ: যাওয়া আসা ছিলো তাদের বাড়ীতে। এতো সমৃদ্ধ যার অগ্রজেরা সে সরকার কোনভাবেই কুষ্টিয়ার মানুষদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ভাবতে পারে না। তার হৃদয়ে আছে বাংলাদেশ আছে কুষ্টিয়া। তিনি কুষ্টিয়ার উন্নতিতে সরাসরি অংশ গ্রহন করতে চান। ভবিষ্যতে আবারও ফিরে ফিরে আসুক এই দিন, তার উপস্থিতিতে সক্রিয় সহোযোগীতায় উন্নতি হউক অত্র অঞ্চলের মানুষের। আর রত্নগর্ভা এই মাটির বুকে কোলে পুনঃ পুনঃ বেড়ে উঠুক নতুন দিনের ঝান্ডাবাহী অনেক অনেক নতুন মুখ।
Wilson's disease and Menki's disease এর চিকিৎসা আবিষ্কারক।
The Hospital for Sick Children
Committee Member, Global Child Health
SickKids International
Research Institute
Committee Member
SPARC BioCentre
Senior Scientist Emeritus
Molecular Structure & Function
University of Toronto
Professor Emeritus
Biochemistry
Other Positions
Andrew Sass-Kortsak Award
Chairman
ডা: ফাতেমা আশরাফের সৌজন্যে