বাবু সুনিল কর্মকারের জন্ম নেত্রকোনার জেলার কেন্দুয়া থানার বার্ণাল গ্রামে। বাবা দীনেশ কর্মকার এবং মা কমলা কর্মকার। ৭ বছর বয়সেই গান তার রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে দখল করে রেখেছিল।
সেই সময়ে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার জেলার কেন্দুয়া থানার বার্ণাল গ্রামের বিশাল গানের আসর বসতো। তখন পাশের গ্রাম থেকে আসতো একসময়ের বিখ্যাত বাউলশিল্পী ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খাঁ। যার গান শুনে ৭ বছরের সুনীল নামে ছেলেটি ঘরে মন বসাতে পারেনি। বার বার ছুটে যেত নদীর ওপাড়ে পাশের গায়েঁ, যেখানে ওস্তাদের বসবাস।
কিন্তু বিধিবাম হঠাৎ করে তার চোখের আলো নিভে যায়। সেই সঙ্গে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খাঁ। কিন্তু নিয়তি তার মনোবলের কাছে হার মানলো।
অন্ধত্ব বরণ করলেও বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকার গানের মায়া ছাড়েননি। বরং ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খাঁর প্রধান শিষ্য ওস্তাদ ইসরাইল মিয়ার কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করল মাত্র ৮ বছর বয়সে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে বেহেলা, দোতারা, তবলা, হারমোনিয়াম বাজাতে শিখে পুরোপুরি পেশাদার শিল্পী হয়ে যায় সে। গান যখন তার রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করে তখন থেকেই ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খাঁর অপ্রকাশিত গানগুলো একটি একটি করে সুর দেওয়া শুরু করেছিল। যার সংখ্যা এখন প্রায় ৮ শতে দাঁড়িয়েছে।
বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকার সম্পর্কে জানা যায়, এখনও প্রায় ২শ’ গান সুর দেওয়ার জন্য বাকি রয়েছে। বাজারে তার গানের ওপর ক্যাসেটও বের হয়েছে। গত ২০০০ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ভারতে, ২০০২ সালে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি।
বর্তমান বাউল শিল্পীদের ভবিষ্যত নিয়ে কথা উঠতেই তিনি খুব আক্ষেপ করে বলেন, যেভাবে আমাদের যাত্রাশিল্প বন্ধ হয়ে গেল, হয়তোবা সেভাবে আমাদের বাউল শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বোমা রাজনীতি আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি অঙ্গনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সরকার যদি আমাদেরকে একটু সহযোগিতা করতো তাহলে হয়তোবা বাউলশিল্পীদের স্বর্ণযুগ আবার ফিরে আসতো।
বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ শহরে আমলাপাড়ায় সপরিবারে বসবাস করছেন। তার দুই ছেলে বিশ্বজিৎ, প্রসেনজিৎ এবং স্ত্রীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। বড় ছেলে বিশ্বজিৎ, ছোট ছেলে প্রসেনজিৎ তারা বাবার গানকে ভালবাসলেও গানের চেয়ে লেখাপড়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে।
তার স্ত্রী ও দুই সন্তান গানকে ভালবাসলেও গানের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের মেয়ে প্রিয়াংকা তার জেঠুকে যেমন ভালবাসে ঠিক তেমনিভাবে তার গানকে ধরে রেখেছে সেই ছোটবেলা থেকে। গানের ঐতিহ্য রক্ষায় ও বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকারের উত্তরসূরি হিসেবে প্রিয়াংকা লেখাপড়ার পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে বাউল গান।