রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার সময়কালে একজন সর্বজনবিদিত প্রসিদ্ধজন। বিশেষত নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর কবির নাম ছড়িয়ে পড়ে উপমহাদেশ থেকে ক্রমশ বিশ্বজুড়ে। রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে তার সময়কালে নানা মজার ঘটনা ঘটে।
সেসবের কিছু তুলে ধরা হলো-
১৯৩৭ সালের ৩ মার্চ কবির কবিতার একটি অংশের ব্যাখ্যা নিয়ে দু’জন ছাত্রের মধ্য বচসা হয় এলাহাবাদে। এই বচসা হতে শেষে হাতাহাতি হয়। ফলে একজনের দাঁতের কামড়ে অন্যজনের ঠোঁট কাটা যায়। তাদের হাঁসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
আবার রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফ সংগ্রহের জন্য সর্বত্রয় বিপুল ভীড় হতো। ১৯৪০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী শান্তিনিকেতন ঘোষণা করে, এখন হতে কবির স্বাক্ষর সংগ্রহকারীকে অন্তত এক টাকা করে দরিদ্র ছাত্রদের সাহায্য ভান্ডারে দান করতে হবে। এটা করা হয় অনেকটা কবিকে অযথা ভিড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য। কিছুটা ওই সুত্রে দরিদ্র ছাত্রদের সাহায্য ভান্ডারে অর্থ সংগ্রহের জন্যও। এক টাকা বেশি নয়। তাই তাতে ভিড় কমানো যায়নি। বরং অটোগ্রাফ দানের দাবী আরো বেড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা অনুকরণ করে ১৯৩৯ সালে বিপদে পড়েছিলো রবিন্দ্রভক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজের বিএ পরীক্ষার্থী দুই ছাত্র। পরীক্ষায় ফেল করার উপক্রম হয়েছিল তাদের। অতিরক্ত বাংলা পরীক্ষায় পরিক্ষক উভয় ছাত্রের হাতের লেখা একই রকমের দেখে সন্দেহ পোষণ করেন। বিষয়টি কলকাতা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তাদের ফল ঘোষণা স্থগিত রাখেন। যদিও তাঁরা পাস করে। একজন ছাত্র তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হয়ে পরীক্ষার খাতায় লেখা তার নিজ হাতের বলে প্রমাণ করে। অপর ছাত্রটি কলেজের সাহিত্য সংসদের সম্পাদক। সত্যাগ্রহী আন্দোলনে তখন জেলে। সংসদের কাযবিবরনী হতে তার হাতের লেখা দেখে স্পস্ট হয় পরীক্ষার খাতার হাতের লেখাটিও তাঁর হাতের। পরে উভয়কেই পাস করানো হয়। তাদের হাতের লেখায় এতই মিল ছিল যে তা কবির লেখা বলে চালানো সম্ভব।
১৯৩৯ সালের মে মাসে কক্সবাজারে ইংরেজী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরষ্কার বিতরণী সভায় রবীন্দ্রনাথের “হে মোর দুভাগা দেশ” শীর্ষক কবিতা আবৃতি করায় আপত্তি জানান স্থানীয় পুলিশ ইন্সপেক্টর মৌলভী শাহাবুদ্দিন। তাঁর মতে, কবিতাটি সরকারবিরোধী। কিন্তু অনুষ্ঠানের সভাপতি মহকুমা ম্যাজিস্টেট সলিমুল্লহা ব্যাখা দেন কবিতাটি বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃক পাঠ্যপুস্তকে অন্ত্রভুক্ত। সুতারাং এ নিয়ে কোন ধরণের আপত্তি হতে পারে না।
কবির নাতি পরিচয় দিয়ে কাবুলিওয়ালাকে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছিল ১৯৩৯ সালে। ইউসুফ খাঁ নামে কাবুলিমহাজন আদালতে অভিযোগ করে যে, যতীন্দ্র মল্লিক নামে এক ব্যক্তি তাঁর কাছ হতে প্রায়শই টাকা ধার নিত। সে রবীন্দ্রনাথ মল্লিক নামের অপর একজনকে কবির নাতি বাসবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে পরিচয় করায় এবং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের বাড়িটি পৈতৃক বাড়ি বলে দেখায়। রবীন্দ্র বাসব সেজে অনেকবার টাকা ধার নেয়। শেষে উভয় আসামি তাঁর কাছ থেকে বাসবেন্দ্র নাম সই করে ৪৫০ টাকা ধার নেয়। কিন্তু তা আর পরিশোধ করেনি। খোঁজ নিয়ে জানে, রবীন্দ্র কবির নাতি বাসবেন্দ্র নয়। এভাবে তাঁকে প্রতারণা করা হয়েছে। আদালত রবীন্দ্র ও যতিন্দ্রকে সশ্রম কারাদন্ড দেয়।
লিখেছেনঃ জাফর ওয়াজেদ