লেখাপড়া না জানা ফকির ইয়াসিন শাহের আনুমানিক বয়স ৬৫ বছর।
যুবক বয়সে যাত্রাদলে বিবেকের অভিনয় করতেন।
যাত্রাদলের সাথেই ভাসমান ইয়াসিন এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতেন ।
আখড়াবাড়ীর ফকির নিজাম উদ্দিন শাহ্ একদিন তাঁকে ডেকে বললেন “বাবা তোমার কণ্ঠতো ভাল; যাত্রা না করে লালনের গান করো’’। কোন এক পহেলা কার্তিকের আগে ফকির নিজামই তাঁকে ধরিয়ে দিলেন লালনের প্রথম গান-
চাতক স্বভাব না হলে ।
অমৃত মেঘের বারি কথায় কি মেলে ।।
গান শুনে ইয়াসিনের হুঁশ হলো, যাত্রাদল ছেড়ে দিয়ে আঁখড়াবাড়িতে যাতায়াত শুরু করলেন; বেছে নিলেন বাউল জীবন । সাধন ভজনে মনযোগী ইয়াসিন মনে করে সাধক হতে গেলে চাতক স্বভাব থাকতে হবে; কবে অমৃত পাওয়া যাবে সেই আশায় বসে থাকতে হবে। তাঁর দীক্ষা গুরুর নাম ফকির আজিজ শাহ্ রেলওয়েতে গেটম্যানের চাকুরী করতেন; বাড়ী পাবনার রূপপুরে। ফকির আজিজ ইয়াসিনকে খেলাফত নিতে বললে সে বলে যে গুরু এতো বড় ভার আমি নিতে পারবো না। খেলাফত অন্য রকম জিনিস-
মনের নেংটী এঁটে করোরে ফকিরি, আমানতের ঘরে হয়ানা যেন চুরি।
ইয়াসিনের ভাষায় “আমার মূল বস্তুটাতো আমানতের জিনিস, আমানত যদি রক্ষা করতে না পারি-সেই ভয়েইতো খেলাফত নেয়নি”।
পরে ইয়াসিন গুরু কাছে প্রথম পাঠ হিসেবে চাল পানি নেন। গুরু প্রসঙ্গে তিনি জানান,
গুরু জারে দয়া করে সেই জানে গুরুদেশের কথা, অনেক ভাগ্যর ফলে সে চাঁদ(গুরু) দেখিতে পাওয়া যায়, আমাবস্যার নায় সে চাঁদে; দ্বিতলে তাঁর কিরণ উদয়, আমার গুরু বড় ভাল মানুষ ছিল। বৃদ্ধ বাউল ফকির ইয়াসিন শাহের বাড়ী ছেউড়িয়াতেই। গান প্রান ইয়াসিন একতারা ছাড়া অন্য কিছু বাজাতে পারেন না; খুব সকালে আঁখরাবাড়িতে আসেন, সন্ধ্যায় ফিরে যান। ফকির ইয়াসিন গানে গানে বেঁধে নিয়েছেন রাত্রি দিন।