বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

সাধু হুমায়ুন ফকির
সাধু হুমায়ুন ফকির

হুমায়ন কবীর (জন্মঃ ৩রা মে ১৯৫৮ মৃত্যুঃ ২৬শে মার্চ ২০১৭ইং) নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার উত্তর মির্জানগর খানাবাড়ী গ্রামে জন্মেছিলেন হুমায়ন কবীর ওরফে ফকীর হুমায়ন সাধু। জন্মস্থানে নিজের নামে আখড়া বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে লালনভক্তদের নিয়ে হতো সাধুসঙ্গ। সিংগায় ফুঁ দেওয়ার শিরোমনি বলা হতো হুমায়ুন সাধুকে। একটানা ৮ মিনিট (মতান্তরে ২৫ মিনিট!) ফুঁ দিতেন তিনি।

হুমায়ন সাধু ছিলেন একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের অবদানের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি লালন অনুসারী এবং অখন্ড দম সাধক। লালন অনুসারীদের মধ্যে তিনিই এক মাত্র সিংগায় ফুঁ দিতেন।

হুমায়ুন সাধুকে নিয়ে কবি কাজল শাহনেওয়াজ লিখেছেন, “১৯৯৮ সালে আমার লালমাটিয়ার দু’রুমের ছোট্ট বাসায় একদল লালন সাধুকে সবিনয় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ভাড়া বাসায় রবীন্দ্রনাথের কুঠি বাড়ির স্পেস ছিলো না, কিন্তু সাধুরা খুব আন্তরিক ভাবেই আসলেন। সেখানে আকলিমা ছিলেন, রবিউল ছিলেন, টুনটুন বাউল ছিলেন, ছিলেন হুমায়ুন সাধু! হুমাযুন ভাইয়ের তখন কালো পর্ব! কালো লম্বা দেহে কালো কাপড়, কালো দাড়ি, কালো কুচকুচে চুল। এভারেজ বাউলদের থেকে দীর্ঘদেহি, সাপের মতো তীক্ষ্ণ চোখ, শক্ত! শুধু হাসিটা প্রাকৃতিক। বললেন, ‘আমরা তো মাছ মাংশ খাইনা। তবে ডিম চলতে পারে!’

লালন অনুসারিদের মধ্যে হুমায়ুন সাধুকে দেখেছি অন্য রকম! সারাজীবন উনি থাকলেন নিঃসঙ্গ ও পুরুষ, যেখানে এই পথটাই হল যুগল সাধনার! অনেক সাধুর মধ্যে আমরা নারী লোভ অনুভব করতে পারি। কিন্তু উনি ছিলেন ভিন্ন কখনও দেখি বা শুনী নাই উনি নারীর প্রতি দুর্বল হয়েছেন।

হুমায়ুন সাধু গভীর দৃষ্টিতে দেখতেন। কি দেখতেন তা নিশ্চয়ই কেউ কেউ জানেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে উনি অনেক মানুষের জন্য একটা বার্তা দিতেন। অনেকের নানা রকম আরবান সাইকোসিস সম্পর্কেও উনি জানতেন। তাদের জন্য কিছু প্রাচীন সংসর্গ দিতেন।

যৌবনে উনি সীমান্ত সেনা (BDR) হয়ে কাজ করেছিলেন। তখন রাতের পর রাত জেগে থাকতেন। অন্যদের হয়ে তাদের ডিউটি করে দিতেন। তার একটা শক্ত কিন্তু খুবই নরম হৃদয় ছিলো। অনেকটা কবি কাজী নজরুলের মতো।

নরসিংদির উত্তর মির্জানগর, রায়পুরা এবং খানাবাড়ি রেল স্টেশনের অনতিদূরে তার একটা ধাম আছে। ঢাকা থেকে স্থপতিরা তা ডিজাইন করেছিলেন। সেখানে গেলে দেখা যায়, হুমায়ুন সাধু কেবল হাসেন। তার সেই ভূবন ভুলানো রহস্যময় শরীরে চমক দেয়া হাসি! বর্তমানে তাঁর হাসির ছবি বড় করে সমাধির পাশে দেওয়া আছে।

প্রথম জীবনে তিনি বিডিআর-এ (বর্তমানে বিজিবি) চাকরি করতেন। চাকুরিরত অবস্থায় তার কর্মস্থল ছিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে। তখন থেকেই তিনি ফকির লালন শাহর সকল কিছু তার ভালো লাগতে শুরু করে। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আখড়ার বাড়িতে সাধুত্ব ও ফকিরী পথ অনুসরণ করেন।

পরে খেলাফত পেয়ে তিনি ১৯৮১ সন থেকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার খানাবাড়ি উত্তর মির্জানগরস্থ্য নিজ বাড়িতে আস্তানা গড়ে তোলেন। দীর্ঘ তিনযুগ যাবত তিনি মির্জানগরস্থ্য তার নিজস্ব আখড়া বাড়িতে ফকিরী কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরই মধ্যে অসংখ্য ভক্ত তার শিষ্যত্বও গ্রহন করেন। প্রতি বছর তার আখড়া বাড়িতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর তিরোধান দিবস উপলক্ষে ৩দিন ব্যাপী মহাধুমধাম লালন স্মরণ উৎসব ও বাউল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে উক্ত অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এই আঁখরা বাড়িতে। প্রত্যেক অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

উনার আঁখরা বাড়ীতে বর্তমানে বছরে তিনটি অনুষ্ঠান পরিচালনা হচ্ছে। উনার মায়ের ওফাত দিবস, লালন তিরোধান (চল্লিশা) এবং উনার ওফাত দিবস।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন