To build a non-communal spirit Bangladesh, Lalon is the ideal of the people
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী (বীর বিক্রম) বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের কোন ধর্ম ও জাত ছিলনা। লালনের একটি মাত্র পরিচয় ছিল সেটি হচ্ছে মানবতা। তিনিই একমাত্র বাউল সাধক যিনি সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন।
তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু লালনের আর্দশে অনুপ্রাণীত হয়ে সেদিন সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তুলতে বলেছিলেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আজকের যুগে তাঁর এই আহবান বাঙালী জাতির জন্য সমকালিন। তাই আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লালনের আর্দশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। গতকাল বুধবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ধর্মের নামে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর নৃশংস বরবর্তা ও হানাহানি করে জাতিকে বিভক্তি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পৃথিবী আজ বড় সংকটে যা কোন সভ্য সমাজের কাম্য নয়। লালন শাহের মত সাধকের বানীই পারে এই সংকট কাটিয়ে উঠার মন্ত্র দিতে। তিনি একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমি সাধুদের সাথে মিশে অনেক আত্মিক তৃপ্তি পেয়েছি। লালনের আর্দশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষায় দিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন গোটা বিশ্বের কাছে নিজের সফলতার কারনে শ্রেষ্ঠ ৩ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে জাতি কোন দিন ঠকেনি। বরং তারা আস্থার জায়গা খুজে পেয়েছে। আইন সকলের জন্য সমান। সেটি প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিচার বিভাগ কে কি তা দেখে না। তাদের চোখে সবাই সমান।
তিনি আরো বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি দেশের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে লালনের ভাবাদর্শ নিয়ে তেমন একটা চর্চা দেখা যায়না। ফকির লালন এর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমাজের সকল প্রকার হানাহানি কাটাকাটি দুর করা সম্ভব। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষিত। তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। আসুন দেশ ও জাতীর কল্যাণে সকলে এক হয়ে লালনের অমর বানী বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায়।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া-১ আসন দৌলতপুরের এমপি আ কা ম সরোয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, বিজ্ঞ জিপি এ্যাড.আখতারুজ্জামান মাসুম, বিজ্ঞ পিপি এ্যাড.অনুপ কুমার নন্দী, লালন একাডেমির আহবায়ক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার শাখার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ।
প্রধান আলোচক হিসেবে লালন সাঁইয়ের জীবন, সৃষ্টি গান ও ফকিরীবাদ নিয়ে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, সাঁইজির ভাবাদর্শ নিয়ে আলোচনা করেন লালন সাঁইজীর মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাদ জাহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের এনডিসি এ.বি.এম.আরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীতি পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। সঙ্গীত পরিবেশন চলে গভীর রাত পর্যন্ত।