বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

ফকির লালন শাঁইজীর স্মরণে দোলপূর্ণিমা উৎসব ২০১৬
ফকির লালন শাঁইজীর স্মরণে দোলপূর্ণিমা উৎসব ২০১৬

নিজামুদ্দিনের ধারণা, হয়তো দোল পূর্ণিমার তিথিতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বলেই লালন তাঁর জীবদ্দশায় ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমার রাতে খোলা মাঠে শিষ্যদের নিয়ে সারারাত ধরে গান বাজনা করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো লালন একাডেমীর প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমার রাতে তিনদিন ব্যাপী লালন স্মরণউৎসব এর আয়োজন করে থাকে।

লালন মুখে মুখেই গানের পদ রচনা করতেন। তাঁর মনে নতুন গান উদয় হলে তিনি শিষ্যদের ডেকে বলতেন- “পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে”। লালন গেয়ে শোনাতেন, ফকির মানিক ও মনিরুদ্দিন শাহ্‌ সেই বাঁধা গান লিখে নিতেন। লালনের জিবদ্দশাতেই তাঁর গান বহুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ফকির মানিক শাহ্‌ সেই সময়ের একজন শ্রেস্থ গায়ক ছিলেন। লালনের শিষ্যদের ধারণা তাঁর গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশী। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এতো বিপুল সংখ্যক গান পাওয়া যায়না। শোনা যায় লালনের কোন কোন শিষ্যর মৃতর পর গানের খাতা তাঁদের কবরে পুঁতে দেয়া হয়। এছাড়াও অনেক ভক্ত গানের খাতা নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ বলেছেন, ফকির বাউল সম্রাট লালন শাহকে লালনের গবেষকরা বহুভাবে উপস্থাপন করেছে। তিনি এমনি একজন সাধক যাকে নিয়ে শতাব্দি ধরে গবেষণা করা চলে। রবীন্দ্রনাথ ও লালনের মতো মানুষসহ বিভিন্ন জ্ঞানীগুনির জন্ম এই কুষ্টিয়ায়। এর জন্য এই কুষ্টিয়া যেমনি গর্ব করে তেমনি আমরা খুলনা বিভাগও গর্ব করতে পারি।

তিনি বলেন, ফরাসী জাতি তাদের আর্ট কালচারের জন্য গর্ববোধ করে, ব্রিটিশরা তাদের পুলিশের কারণে গর্ববোধ করে, বিদেশে বাঙালীরাও নাকি রান্নাবান্নার দিক দিয়ে গর্ববোধ করে আর এই কুষ্টিয়ার মানুষেরা লালন ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে। লালন শুধু এই কুষ্টিয়া বা এই দেশের নয়, তার অমিয় বাণী ছড়িয়েছে বিশ্বময়।

বৃহস্পতিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাঁইজীর স্মরণোৎসব উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভার দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

লালন সারাবিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, লালনের এই কুষ্টিয়াসহ বৃহত্তর জেলায় থেকে শুরু করে সুন্দরবন পর্যন্ত একটা হেরিটেজ ট্যুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে লালনকে সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। লালনের সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচকরা নানান তথ্য দিয়েছে। লালনের জীবন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তার চিন্তা চেতনা ভাবনা সমসাময়িক। আজকে সবলোকে কয় লালন কি জাতে সংসারে। লালন বলতে চাই আমি মানুষ এটিই বড় কথা। হিন্দু কি মুসলিম এটি বড় বিষয় নয়।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই, সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, লালনের এই অমীয় বাণী আজকের সময়ের জন্য লালনের চিন্তা তার চেতনা মানুষকে মানবিক করার জন্য আলোকিত পৃথিবী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনিবার্য। লালন শাঁই সমাজের সকল শ্রেণী ধর্মের মানুষকে আমৃত্যুকাল পর্যন্ত এক করে দেখেছেন। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন ছিল বৈচিত্রময়। তাই আসুন লালনের বানী আমরা আমাদের মনের কোণে ধারণ করি।

এবারের স্মরণ উৎসব দিবস অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। তিনদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান চললেও বাউল সাধুরা অনুষ্ঠানের শুরুর আগের দিনে মঙ্গলবার গুরুকার্য আর পর দিন বুধবার বাল্যসেবা নিয়ে অনেক সাধুই আখড়াবাড়ী ছাড়তে শুরু করেন।

বাউল সম্রাট লালন শাহ’র স্মরণোৎসব দিবস উপলক্ষে আখড়াবাড়ী প্রাঙ্গনে বসেছিলো গ্রামীণ মেলা। মেলায় নাগরদোলাসহ বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। লালন মঞ্চ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড করে বাউলরা বসেছিলো গানের আসর নিয়ে। আলোচনা শেষে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীত পরিবেশিত হয়।

১লা কার্ত্তিক ১৪২২ বাংলা, ১৬ই অক্টোবর ২০১৬ লালন তিরোধান উৎসব ২০১৬ আসার নিমন্ত্রন রইল।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন