বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

প্রযুক্তি কি?
প্রযুক্তি কি?

প্রযুক্তি (Technology) বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কিভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল। অবশ্য অনেক প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন থেকেই আবার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেক জ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, "প্রযুক্তি হল কিছু প্রায়োগিক কৌশল যা মানুষ তার প্রতিবেশের উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে।" যেকোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতারকেও প্রযুক্তি বলা হয়।

আমরা যে পৃথিবী তে বাস করি তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রযুক্তি হল জ্ঞান, যন্ত্র এবং তন্ত্রের ব্যবহার কৌশল যা আমরা আমাদের জীবন সহজ করার স্বার্থে ব্যবহার করছি।

প্রযুক্তি জীবন চক্র

প্রযুক্তির জীবন চক্রের চারটি পর্যায় রয়েছে। পাশের চিত্রে এটি বোঝা যাচ্ছে। ধাপ চারটি হচ্ছে:

  • গবেষণা ও উন্নয়ন: research and development
  • সমুত্থান ও বাণিজ্যিকীকরণ: ascent and commercialization
  • ব্যাপন ও পরিপক্বতা: diffusion and maturity
  • পতন ও প্রতিকল্পন: decline and substitution

প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ

  • এরোস্পেস প্রযুক্তি: মহাকাশ অভিযানের জন্য ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ যান তৈরি এবং চালনা। নভোযান উৎক্ষেপণ, উচ্চ গতি সম্পন্ন আকাশযান, বিমান , নভোযান নির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত ভূ-কেন্দ্রিক উপকরণসময় তৈরি এই প্রযুক্তির কাজ। ভৌগোলিক যোগাযোগ এবং তথ্য চালনা পদ্ধতি এখান থেকেই উন্নয়ন লাভ করে।
  • কৃষি প্রযুক্তি: এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথাগত ট্রাক্টর এবং চাষের অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাথে আধুনিক ল্যাপটপ এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম-এর সমন্বয় ঘটায়। খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি খুটিনাটি বিষয় তলিয়ে দেখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিই এর মূল কাজ।
  • জৈব প্রযুক্তি: জীবনের মূল উপাদান এবং একক যেমন, কোষ, জিন এবং ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে অধ্যয়ন।
  • নির্মাণ প্রযুক্তি:
  • প্রকৌশল প্রযুক্তি:
  • পরিবেশগত প্রযুক্তি:
  • ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা:
  • তথ্য প্রযুক্তি:
  • উৎপাদন প্রযুক্তি:
  • নৌ প্রযুক্তি:
  • মাইক্রো প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি:
  • রাসায়নিক প্রযুক্তি:
  • যাতায়াত প্রযুক্তি:

সাধারণ প্রশ্ন এবং উত্তরঃ-

প্রশ্নঃ- প্রযুক্তি কি? প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের পার্থক্য কি ?

উত্তরঃ- বিজ্ঞান: বিজ্ঞান হল প্রকৃতি, প্রানী, মহাকাশ, সমূদ্র, বায়ুমন্ডল সহ আমাদের চারপাশে খুটিনাটি যা কিছু আছে তার সম্পর্কে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ধারনা অর্জন করা। আমাদের চারপাশের সবকিছুর গঠন, প্রকৃতি, কার্যপ্রণালী সহ সবকিছু সম্পর্কে ধারণা নেওয়াই হল বিজ্ঞান। আর যিনি কোন একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান রাখেন, তাকে বিজ্ঞানী বলা হয়।

প্রযুক্তি: বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে নতুন কোন কিছু তৈরি করা এবং জীবনমানকে আরো উন্নত করাই হল প্রযুক্তি। যিনি বিজ্ঞানকে এই সকল কাজে লাগান, তিনি প্রযুক্তিবিদ। যেমন: মোবাইল ফোন প্রযুক্তির একটি অবদান। কারন এর প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ কোন না কোন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন। আর প্রযুক্তিবিদ সেই আবিষ্কারগুলি একত্রিত করে মোবাইল ফোন তৈরি করেছেন।

তাই বিজ্ঞান হল অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা। আর প্রযুক্তি হল বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা।

প্রশ্নঃ- প্রযুক্তি কি আমাদের মস্তিষ্ককে উন্নত করতে পারে?

উত্তরঃ- কম্পিউটার নামের অতি পরিচিত যন্ত্রটা তো মানুষের মস্তিষ্কের আদলেই তৈরি। এখন মানব মস্তিষ্ক ও কম্পিউটারের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তির পরীক্ষাগারে নিয়মিত কথা হয়। এই যোগাযোগ দিনে দিনে বাড়ছে। তাতে লাভটা কী?

ভেবে দেখুন, পঙ্গু লোকজন কেবল চিন্তার সাহায্যে যান্ত্রিক বা রোবটিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালাতে পারছে। এতে গবেষকদের আশার ব্যাপ্তি বাড়ছে। হয়তো একদিন মস্তিষ্কটা কম্পিউটারের ভেতরে রেখে দেওয়া (আপলোড) সম্ভব হবে। পরিণামে মানুষের শারীরিক শক্তিসামর্থ্য বহুগুণ বেড়ে যাবে। কারণ, যন্ত্রের সহায়তায় তখন মানবদেহ ও মানব মন—দুটোরই ক্ষমতা বাড়বে।

মহাকাশ প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি মন ও কম্পিউটারের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য নিউরালিংক নামের একটা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়েছেন।

মাস্কের প্রতিষ্ঠান এখন কী করছে? সর্বশেষ তারা ‘নিউরাল লেইস’ প্রযুক্তি বানিয়েছে। এটা সংকেত পরিমাপের জন্য মস্তিষ্কে একধরনের পরিবাহী বা তার বসাবে। সে জন্য শল্যচিকিৎসা দরকার।

বর্তমান প্রযুক্তির নানা সীমাবদ্ধতার জন্য এই প্রকল্পকে অতি উচ্চাভিলাষী মনে হতে পারে। তবে প্রযুক্তি গবেষকেরা যুগান্তকারী সাফল্যের জন্য নিরলস কাজ করছেন।

বাস্তবতা হলো, আমরা এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। তবু সম্মিলিত চেষ্টায় নিশ্চয়ই সব বাধা দূর করা সম্ভব হবে।

প্রশ্নঃ- প্রযুক্তি কি দারিদ্রতা কমাতে পারে?

উত্তরঃ- বিজ্ঞান প্রযুক্তি অবশ্যই দারিদ্র কমাতে পারে। কিন্তু চিন্তা ভাবনার পরিধি কমিয়ে দেয়। কার্ল মার্কস এর মতে মানুষের মন থেকে যত দিন পর্যন্ত আরো খাব,আরো পরব এই ধরনের চিন্তা না কমবে ততদিন পর্যন্ত মানুষের যাবতীয় দুঃখ বজায় থাকবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি মানুষের যান্ত্রিক স্বচ্ছন্দতা বাড়ালেও দারিদ্র কমাতে মানুষের সচেতনতা থাকাটা জরুরি।

প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারি। এক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রচণ্ড দৈন্য রয়েছে । সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন করার স্বপ্নের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের অনেক বেলা গড়িয়েছে। আমরা সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন করতে পারিনি; কিন্তু মাঝখান দিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে ইংরেজী ভাষার দক্ষতা হারিয়েছি । ফলে ইংরেজী আর ডিজিটাল প্রযুক্তি দুটোই এখন তরুন সমাজের জন্য সোনার হরিণে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যাহোক তারপরও বাংলাদেশের যুবসমাজ স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নিম্নমানের ইংরেজী জ্ঞান নিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির তুমুল প্রতিযোগিতায় এরা কতদূর যেতে পারবে? এর সাফল্য নির্ভর করবে বাংলাদেশের যুব সমাজ কত দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে ইংরেজী রপ্ত করতে পারে।

এ জন্যও ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য লাগবে। কারণ আমাদের স্কুল-কলেজে মানসম্পন্ন ইংরেজী শেখানোর জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং শিক্ষক নেই। শহরে কিছু ব্যবস্থা থাকলেও, গ্রামের অবস্থা বড়ই করুণ। এক্ষেত্রে যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তা মেটানোর মতো বিকল্প ব্যবস্থা কি হতে পারে? বিগত দশকে বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোবাইল প্রযুক্তিকে ধারণ করেছে। দেশে এখন ১০ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। বলা যায় শতকরা ৮০ জন মানুষ এখন অন্তত একটি মোবাইল ফোনের মালিক এবং এটা সুদূর গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত।

সুতরাং দ্রুত ইংরেজী শেখার জন্য মোবাইল ফোন হতে পারে একটি চমৎকার মাধ্যম । পক্ষান্তরে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পারফরমেন্স খুবই খারাপ। গত ২০১০ সাল পর্যন্ত মাত্র শতকরা ৪ জন কম্পিউটারের সাহায্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মালিক হতে পেরেছে মাত্র শতকরা ৩ জন। তবে সাইবার ক্যাফের সংখ্যা বেড়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়েছে। আইএসপি-র সংখ্যা এখন ৮০-র বেশী। কিন্তু এগুলি কতটুকু শিক্ষা এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বলা মুশকিল। প্রযুক্তির যা প্রসার হয়েছে সে কথা না বললেও; দুঃখজনক হচ্ছে এখানেও জেন্ডার বৈষম্য অতি প্রকট।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশী মহিলা হলেও, ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু বিপজ্জনকভাবে পিছিয়ে আছে।

প্রশ্নঃ- প্রযুক্তি কি আশীর্বাদ না অভিশাপ ?

উত্তরঃ- প্রযুক্তি কি আমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা, স্নেহ সবকিছু গ্রাস করে নিচ্ছে? নাকি এর সহজলভ্যতা আমাদের অলস বানিয়ে দিচ্ছে? শুনতে খারাপ লাগলেও কথাগুলো কিছুটা হলেও সত্যি। আমরা প্রযুক্তিতে এতটাই নিজেকে জড়িয়ে ফেলছি যে, মাঝে মাঝে যন্ত্রের মতো আচরণ করছি আমরা।

আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন সৃষ্টির জন্য, ধ্বংসের জন্য নই। প্রযুক্তির উত্থান এবং বিস্তার মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব—তার আবেগ, অনুভূতি, প্রেম, ভালোবাসা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, ঘৃণা, ত্যাগ নামক গুণাবলির জন্য। প্রযুক্তির সৃষ্ট যন্ত্রের মতো আমরাও যাতে যন্ত্র হয়ে না যাই। কারণ প্রযুক্তি আমাদের জন্য, আমরা প্রযুক্তির জন্য নই।

প্রশ্নঃ- প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি চিরদিন বেঁচে থাকা সম্ভব?

উত্তরঃ- বিজ্ঞানীরা মস্তিস্কের সাথে কম্পিউটারের সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করে আছে। এটি সার্থক হলে তখন হয়তো কিছু একটা হতে পারে। এতে মানুষের মন দেহ থেকে আলাদা করা সম্ভব হবে এবং এক ডিজিটাল জীবনের সূচনা হতে পারে।

Add comment

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.