বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

ঢেঁড়স
ঢেঁড়স

ঢেঁড়শ (অন্য নাম ভেন্ডি) মালভেসি পরিবারের এক প্রকারের সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি তুলা, কোকো ও হিবিস্কাসের সাথে সম্পর্কিত। ঢেঁড়শ গাছের কাঁচা ফলকে সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus; অথবা Hibiscus esculentus।

ঢেঁড়শ গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা ১০-২০ সেমি দীর্ঘ এবং চওড়া। পাতায় ৫-৭টি অংশ থাকে। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া, পাঁপড়ির রঙ সাদাটে হলুদ, ৫টি পাঁপড়ি থাকে। প্রতিটি পাঁপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপী বিন্দু থাকে। ঢেঁড়শ ফল ক্যাপসুল আকারের, প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, এবং এর ভেতরে অসংখ্য বিচি থাকে।

ঢেঁড়শের আদি নিবাস ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি এলাকায়। সেখান থেকে কীভাবে এটি অন্যত্র ছড়িয়ে যায়, তা জানা যায় না। মিশরীয় ও মূর জাতির বিভিন্ন রচনায় ১২শ ও ১৩শ শতকে আরবি ভাষায় ঢেঁড়শের কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে ধারণা করা যায় যে, প্রাচ্য হতেই এটি সেখানে এসেছে। সম্ভবত ইথিওপিয়া হতে লোহিত সাগর বা আরব উপদ্বীপের নিকটবর্তী বাব-আল-মান্দিব প্রণালী পেরিয়ে এটি আরবে ও পরে ইউরোপে যায়। ১২১৬ সালে এক স্পেনীয় মূর জাতির ব্যক্তির লেখায় এর উল্লেখ রয়েছে। মিশর ভ্রমণকালে এই মূর তার রচনায় উল্লেখ করেন, স্থানীয় ব্যক্তিরা ঢেঁড়শের ফল আটার সাথে মিশিয়ে খেতো।

আরব থেকে ঢেঁড়শ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে, ও পরে পূর্বদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষের প্রাচীন ভাষাগুলোতে এই গাছটির নামের উল্লেখ নেই, তা থেকে ধারণা করা যায়, খ্রিস্টের জন্মের পরেই কেবল এই গাছটি ভারতবর্ষে আসে। আটলান্টিক মহাসাগরের দাস বাণিজ্যের অংশ হিসেবে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোর মাধ্যমে ঢেঁড়শ আমেরিকা মহাদেশে আসে। ১৬৫৮ সাল নাগাদ ব্রাজিলে এর উপস্থিতির উল্লেখ পাওয়া গেছে। ১৬৮৬ সাল নাগাদ এটি সুরিনামে পৌছে যায়।

উত্তর আমেরিকাতে, বিশেষত দক্ষিণ-পূর্বাংশে ঢেঁড়শের আগমণ ঘটে ১৮শ শতকের শুরুর দিকে। ১৭৪৮ সালে এটি উত্তরে ফিলাডেলফিয়া এলাকাতেও চাষ করা হতো। টমাস জেফারসনের রচনায় উল্লেখ রয়েছে, ১৭৮১ সালে ভার্জিনিয়াতে ব্যাপকভাবে ঢেঁড়শের চাষ করা হতো।

ঢেঁড়সের উপকারিতাঃ-

ঢেঁড়সে রয়েছে ভিটামিন-এ, ‘ফাইবার’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ঢেঁড়স। ঢেঁড়সের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ, যা শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে। এতে রয়েছে ‘পেকটিন’ নামের বিশেষ উপাদান, যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে। এতে ‘অ্যাথেরোসক্লোরোসিস’ নামের জটিল রোগ প্রতিরোধ হয়।

গর্ভাবস্থায় ভ্রণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে ঢেঁড়স। এই সবজি ‘মিসক্যারেজ’ হওয়া প্রতিরোধ করে। ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে ঢেঁড়স। ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান।

ঢেঁড়স অ্যাজমা প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বেশ উপকারী। কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ঢেঁড়স। ঢেঁড়স বিষণ্নতা, দুর্বলতা ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। ঢেঁড়সে আছে বেটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও লিউটিন; যা চোখের গ্লুকোমা এবং চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ঢেঁড়স ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের মতো প্রয়োজনীয় মিনারেল রয়েছে ঢেঁড়সে। এগুলো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

ঢেঁড়সে রয়েছে উচ্চপরিমাণ আঁশ। এটা হজমে সাহায্য করে। ‘পেকটিন’ অন্ত্রের ফোলা ভাব কমায় এবং অন্ত্র থেকে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার করে। ঢেঁড়স চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুশকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।

Add comment

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন