Kushtia industry
বৃহৎ, মাঝারী, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য কুষ্টিয়ার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। কুষ্টিয়া বিসিক, পোড়াদাহ, খাজানগর, কুমারখালি, আল্লার দরগা উল্লেখ যোগ্য প্রতিষ্ঠিত শিল্প কলকারখানা রয়েছে। কুষ্টিয়ার পণ্যর চাহিদা রয়েছে সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্ব দরবারে। কুষ্টিয়া জেলার চাল, আলু, পিয়াজ, পান, কলা, তামাক, বস্ত্র ইত্যাদি পণ্য ব্যাপক পরিচিত সারা বাংলাদেশ। এক সময় পাট এবং আঁখের জন্যও বিখ্যাত ছিল।
কুষ্টিয়ার উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো হলোঃ
- কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড
- ইস্টার্ণ ফেব্রিক্স ইন্ডাঃ লিঃ
- বুলবুল টেক্সটাইল লিঃ
- রেণউইক যজ্ঞেশ্বর এ্যান্ড কোং (বিডি) লিঃ
- বি আর বি কেবলস ইন্ডাস্টিজ লিঃ
- এম আর এস ইন্ডাস্ট্রিজ
- কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ
- বিএটিবি
- নাসির টোবাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ
- কুষ্টিয়া সুগার মিলস লিঃ
- ব্রিটিশ টোবাকো লিঃ
এখানে বিসিক শিল্প নগরী লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ। অন্যান্য তথ্যাদি নিম্নরূপঃ বৃহৎ শিল্পঃ ১৫টি, মাঝারী শিল্পঃ ৩৮টি, ক্ষুদ্র শিল্পঃ ৫২১২টি, কুটির শিল্পঃ ২১৮৩৭টি(সরকারী তথ্য অনুযায়ী)।
মোহিনী মিলসঃ
দীর্ঘদিন যাবৎ কুষ্টিয়া তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। কুমারখালীর এলিঙ্গি গ্রামের মোহিনী মোহন চক্রবর্ত্তী (১২৪৫-১৩৭৯ বঙ্গাব্দ) কুষ্টিয়া শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘‘চক্রবর্ত্তী এন্ড সন্স’’ নামীয় কোম্পানী এবং তিনি ১৯০৮ সালে একশ বিঘা জমির উপর নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন মোহিনী মোহন মিলস্ এন্ড কোম্পানী নামের বস্ত্র কলটি। মাত্র আটটি তাঁত নিয়ে এ কোম্পানীর যাত্রা। পরে ৫৩৭ টি তাঁতের এ শিল্পে মোট আড়াই হাজার কর্মচারী নিয়োজিত ছিল। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় এটি শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হয় এবং দেশ স্বাধীনের পর মোহিনী মিলস ১৯৭২ সালে সরকার এটিকে জাতীয়করণ করে। এই মিলের তৈরি ধূতি ও শাড়ী বহুকাল মানুষের প্রিয় ছিল। ১৯৮২ সালে লোকসানের অজুহাতে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
রেণউইক যজ্ঞেশ্বর এন্ড কোম্পানী (বিডি) লিঃ
রাজশাহী জেলার লক্ষণহাটিতে ১৮৮১ সালে ওয়াটসন এন্ড কোম্পানী ছোট আকারে একটি কৃষি সরঞ্জাম কারখানা নির্মাণ করে। টেগোর এন্ড কোম্পানী ১৮৯৬ সালে কৃষি সরঞ্জাম ও প্রধানতঃ আখ মাড়াই এবং পাট বিক্রয়ের একটি প্রতিষ্ঠান বর্তমান মিলপাড়াতে প্রতিষ্ঠা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রতিষ্ঠানের তিনজন মালিকের মধ্যে একজন ছিলেন। পরে তারা এ কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম রেণউইক কুষ্টিয়ায় অনুরূপ কারখানা নির্মাণ করেন। ১৯৪১ সালে এটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কারখানাটির প্রধান অফিস ছিল কলকাতায়। দেশ বিভাগের পর মিঃ দেশাই নামক একজন মাদ্রাজি শিল্পপতি কারখানাটি ক্রয় করেন। দেশ স্বাধীনের পরে একে জাতীয়করণ করা হয়। এখানে সাধারণতঃ আখ মাড়াই কল, কড়াই, নলকূপ, চাল কল, গম কল ও তেল কলের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়।
কুষ্টিয়া সুগার মিলস্ লিঃ
কুষ্টিয়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে ১৮৩০ সালে প্রথম চিনি উৎপাদন কারখানা স্থাপন করা হয় শিলাইদহতে। এ এলাকাটি আখ চাষের উপযোগী বিধায় ১৯৬৫ সালে জগতিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় কুষ্টিয়া সুগার মিলস লিঃ। এই মিলের দৈনিক আখ মাড়াই এর ক্ষমতা ১৫২৪ মেঃ টন এবং উৎপাদনের ক্ষমতা ১৫০ মেঃ টন।
বি আর বি কেবলস্ ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ
কুষ্টিয়া জেলার কৃতি সন্তান জনাব মোঃ মজিবর রহমান ১৯৭৯ সালে ২৩ অক্টোবর কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি (বজলার রহমান এবং ব্রাদার্স) কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ। শুরুতে নিজেদের ইকুইটি ও পূবালী ব্যাংকের অর্থায়নে এর উৎপাদন আরম্ভ হয়। ১৯৯৪ সালে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নের প্রসার ঘটলে তিনি কেবল উৎপাদন বাড়িয়ে দেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে উন্নতবিশ্বের উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপন পূর্বক কারখানাটির সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে উন্নত ও গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের কেবল বাজার দখল করে নেয়। বর্তমানে এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বৃটেন, জার্মানী, জাপানসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানী করা হয়। এই কারখানায় উন্নতমানের -
- পিভিসি ওয়্যারস এন্ড ক্যাবল
- অল এ্যালুমিনিয়াম কন্ডাক্টর (এএসি)
- এ্যালুমিনিয়াম কন্ডাক্টর ষ্টীল রিইনফোর্সড (এএএসি)
- এফ আর এল এস ক্যাবল
- সুপার এনামেল্ডকপার ওয়্যার ইত্যাদি প্রস্ত্তত করা হয়।
কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজঃ
১৯৯০ সালের ৮ অক্টোবর পিতা কিয়াম উদ্দিন এর নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই কারখানায় মেটালের তৈরী এ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র ননস্টিক কিচেন ওয়ার পেসার কুকার ইত্যাদি দেশের বাজারসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সাড়া জাগিয়েছে। এরপর ১৯৯২ সালে তিনি এমআরএস ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রায় ১৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ‘গোবি ইন্টারন্যাশনাল’ পরিচালিত জরিপে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ বিশ্বের শীর্ষ ইন্ডাস্ট্রিজ গুলোর মধ্যে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে।
এছাড়াও কুমারখালি এবং পোড়াদাহ বেশ কিছু বস্ত্র শিল্প আছে। বিছানার চাঁদর, গামছা, লুঙ্গি উল্লেখযোগ্য যা দেশ ছেড়ে বিদেশেও সমাদৃত। কুষ্টিয়ার খাজানগর বর্তমানে চালের জন্য বিখ্যাত। আল্লাহ্ দরগা রয়েছে বেশ কিছু নামধারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। ম্যাচ, বিড়ি, সিকারেট, সিরামিক ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ভরপুর আল্লাহ্ দরগা।