বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

চলন বিল
চলন বিল

চলন বিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। এটি রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, এবং পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সাতচল্লিশটি নদী ও অন্যান্য জলপথ চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিলটিতে পলিমাটি জমে, এর আকার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।

চলন বিল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমি অঞ্চল। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা এই তিন জেলার নয়টি থানা মিলে চলন বিলের অবস্থান। নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম; সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া (আংশিক) ও নবগঠিত সলঙ্গা এবং পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর থানা এলাকাকে বর্তমানে চলন বিল অঞ্চল নামে অভিহিত করা হয়। চলনবিলের উত্তরে বগুড়া জেলাসীমা, দক্ষিণে পাবনা জেলার আটঘরিয়া ও ইশ্বরদী থানা, পূর্বে উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ রেললাইন এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলার আত্রাই ও রানীনগর থানা। রানীনগর থানার পারিল ইউনিয়নের রক্তদহ বিল এককালে চলনবিলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে এটি চলনবিলের উত্তর-পশ্চিম সীমা নির্দেশ করছে।

চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার জল নিষ্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে জল নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে। চলন বিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি।

সরদার আব্দুল হামিদ তাঁর 'চলনবিলের ইতিকথা'য় চলনবিল নামকরনের প্রসংঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেখানে চলনবিলের নামকরণের সাথে চোল সমুদ্রের কথাটি এসেছে। চলনবিলের এই নিচু এলাকার সাথে যুক্ত ছিল ছোটো বড়ো বেশ কিছু নদী। নদীর সংযোগের কারণে চলনবিলের পানি সবসময় চলমান থাকতো। প্রাচীনকালে উরিষ্যা অঞ্চলে চোল রাজবংশ এবং চোল সমুদ্র বা চোল হ্রদ ছিল বলে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। ফলে চোলা রাজবংশ বা চোলা বিল থেকেও চলনবিলের নামকরণ হতে পারে ধারণা করা হয়।

বর্তমানে চলনবিল অনেক ছোটো হয়ে গেছে, কিন্তু বর্ষাকালে চলবিল উগ্রমূর্তি ধারণ করে। নদী,খাল, জোলা, খাড়িসমূহ চলনবিলকে এমনভাবে বেঁধে আছে যে, স্বাভাবিকভাবেই বর্ষাকালে এর জলরাশিতে স্রোত বয়। আর এই স্রোতের চলমানতার কারণেই চলনবিল নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১৪২৪ বর্গকিলোমিটার। আবার কোন জরিপ মতে চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা প্রায় ২০৭২ কিলোমিটার। পূর্ব-পশ্চিমে দৈর্ঘ্য ৩২ মাইল এবং উত্তর দক্ষিণে প্রস্থ সাড়ে ২৪ মাইল। বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১১৫০ বর্গ কিলেমিটারে। শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র পাক-ভারত উপমহাদেশে চলনবিলের ন্যায় আয়তন বিশিষ্ট আর কোনো বিল আছে বলে জানা যায় না।

বিলসমূহ

আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। চলন বিল গঠনকারী ছোট ছোট বিলগুলি পশ্চিম থেকে পূর্বে যথাক্রমে:

  1. পূর্ব মধ্যনগর
  2. পিপরুল
  3. ডাঙাপাড়া
  4. লারোর
  5. তাজপুর
  6. নিয়ালা
  7. চলন
  8. মাঝগাঁও
  9. ব্রিয়াশো
  10. চোনমোহন
  11. শাতাইল
  12. খরদহ
  13. দারিকুশি
  14. কাজীপাড়া
  15. গজনা
  16. বড়বিল
  17. সোনাপাতিলা
  18. ঘুঘুদহ
  19. কুরলিয়া
  20. চিরল
  21. দিক্ষিবিল এবং
  22. গুরকা

বড় আকারের বিলগুলির বেশিরভাগই পাবনা জেলায় অবস্থিত, যেমন- গজনা বিল, বড়বিল, সোনাপাতিলা বিল, ঘুঘুদহ, চিরল বিল এবং গুরকা বিল। গজনা বিল দুলাই-এর দক্ষিণে ১২৩ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বড়বিলের আয়তন ৩১ বর্গ কিমি। প্রায় ৩৫ বর্গ কিমি আয়তনের সোনাপাতিলা বিল পাবনা জেলার উত্তরাংশ জুড়ে অবস্থিত। চাটমোহর উপজেলায় কুরলিয়া ও দিক্ষিবিল দুটি যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। চিরল ও গুরকা বিল- উভয়েরই আয়তন ৮ বর্গ কিমি এবং ঘুঘুদহ ৪ বর্গ কিমি।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন