বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বংশীতলার যুদ্ধ
বংশীতলার যুদ্ধ

দূর্বাচারা গ্রামে জিয়াউল বারী নোমানের নেতৃত্বে বি এল এফ এর একটি দল ছিল। তাদের পৃথক ক্যাম্প ছিল। এমন একটি ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন শামসুল হাদী। ৫ই সেপ্টেম্বর তার অনুপস্থিতিতে ক্যাম্প ইনর্চাজ ছিলেন শাহাবুব আলী ও বাহার তাদের নেতৃত্বে প্রায় ২০০মুক্তিযোদ্ধা ছিল। রাজাকার বাহিনী কুষ্টিয়ার পিস কমিটিকে জানিয়ে দেয়। পিস কমিটি আর্মি ক্যাম্পে জানালে পাকিস্তানী বাহিনী ভাদালিয়া হয়ে দূর্বাচারার দিকে অগ্রসর হয় । পাকসেনা আসছে এ খবর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পৌছে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দূর্বাচারার ২ মাইল পশ্চিমে বংশীতলায় মধ্যরাত থেকে এ্যাম্বুশ করে।

পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত পাকিস্তানীদের খোঁজ না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নাস্তা করার জন্য অবস্থান ছেড়ে উঠে যায় । এল এম জি ম্যান আব্দুল কুদ্দুস ও সেকেম আলী বংশীতলার ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের পূর্ব দিকে অবস্থান নিলে পাকিস্তানী সেনাদের পায়ে হেটে এগিয়ে আসতে দেখে। পাকিস্তানী সৈন্যরা খুব কাছাকাছি চলে আসলে আব্দুল কুদ্দুস এলএমজির ব্রাশ ফায়ার করে দেয়। হঠাৎ আক্রমনে পাকিস্তানীরা হতভম্ভ হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন করতে পারে না। ঘটনাস্থলে বহু পাকিস্তানী নিহত হয়। বিরতিহীন গুলিবর্ষণে আব্দুল কুদ্দুসের এলএমজি জ্যাম হয়ে যায়। এই সুযোগে পাকিস্তানী সৈন্যরা গুলি করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস পায়ে গুলি বিদ্ধ হন। তারপরও তিনি এলএমজি টি পানিতে ফেলে দিয়ে সঙ্গী সেকেম আলী সহ ডুব সাঁতার দিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের নাগালের বাইরে চলে যান। এই সময়ে মধ্যে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে এসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। বংশীতলা হতে ৩ মাইল দুরে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যরা সেল নিক্ষেপ শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ চলার পরে উভয় পক্ষ পিছু হটতে থাকে। এই যুদ্ধে ৪৫/৫০ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও কয়েক জন অফিসার নিহত হয়।

বংশীতলার যুদ্ধে শহীদ হনঃ

  • তাজুল ইসলাম -পিতা আব্দুল করিম শেখ
  • খোরশেদ আলম দিল -পিতা শাদ আহমদ
  • শেখ দিদার আলী- পিতা নূরুল ইসলাম
  • ইয়াকুব আলী শেখ- পিতা কুদরত আলী
  • গোলাম মোসত্মফা রাজ্জাক -পিতা মোহাম্মদ আলী শেখ
  • আবু দাউদ- পিতা ইয়াদ আলী গ্রাম
  • চাঁদ আলী মোল্লা গ্রাম
  • আব্দুল মান্নান -পিতা মোজাহার উদ্দিন
  • মোবারক মোল্লা

আ ক ম আজাদ(পিতা-মোঃ শামছুদ্দিন, পিয়ারপুর, কুষ্টিয়া), শফিউল ইসলাম জিল্লু (পিতা আমিরুল ইসলাম,কেনীরোড়,কুষ্টিয়া), মতিয়ার রহমান ( গ্রাম মনোহরদিয়া), ফিরোজ আহম্মেদ (আমলাপাড়া কুষ্টিয়া), হাবিবুর রহমান (শেরকান্দি, কুমারখালী), আব্দুল কুদ্দুস (মঙ্গল বাড়ীয়া, কুষ্টিয়া ), আব্দুল খালেক (হাটস হরিপুর, কুষ্টিয়া ) সহ আরো অনেকে আহত হন ।

পরদিন পাকিস্তানীরা বংশীতলা দূর্বাচারা ও আশেপাশের এলাকায় বিমান হামলা করে।

এছাড়াও শেরপুর যুদ্ধ ছিলো স্মরণীয় ঘটনা।

যুদ্ধকালীন সময়ে এ্যাডভোকেট সাদ আহম্মেদের নেতৃত্বে পিস কমিটি গঠন ও রাজাকার সৃষ্টি করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।

৯ই ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর বাদে সমগ্র কুষ্টিয়া (১ ডিসেম্বর মেহেরপুর ও ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা ) মুক্ত হয়ে যায়। কুষ্টিয়া শহর মুক্ত করার জন্য মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া শহরের চারিদিক থেকে আক্রমন শুরু করে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট এবং ঝিনাইদহ সাব ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানী সৈন্য কুষ্টিয়া শহর দিয়ে, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরের সৈন্য পোড়াদহ দিয়ে এবং দৌলতপুরের সৈন্য ভেড়ামারা দিয়ে পাকশী ঘাটে সমাবেত হয়। ব্রিজের উপর দিয়ে, নৌকায়, ফেরিতে করে ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে যাত্রা শুরু করে এমন সময় মিত্রবাহিনীর বিমান হতে বোম্বিং শুরু হয়। মিত্রবাহিনীর বোমার আঘাতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায় বহু পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের তাবেদার রাজাকার বাহিনী নিহত হয় ।

রণক্ষেত্রে যখন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা হাতে অস্ত্র নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল বদর জামায়াত ও মুসলিম লীগের দালালদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধরত তখন কিছু বাঙালী হাতে কলম তুলে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য ও পাক হানাদারদের কার্যক্রম তুলে ধরতে তারা বহু পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। এই ধরনের একটি পত্রিকা স্বাধীন বাংলা। স্বাধীন বাংলা বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার শামছুল আলম দুদুর প্রকাশনায়, সাপ্তাহিক মশাল সম্পাদক ওয়ালিউল বারী চৌধুরীর সম্পাদনায় ও সাপ্তাহিক দর্শক সম্পাদক লিয়াকত আলীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদনায় মুজিবনগর থেকে ১লা মে স্বাধীন বাংলা নামের সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।

কুষ্টিয়ার শরণার্থীদের সাহায্যার্থে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক সমিতি নামে একটি সংগঠন মে থেকে জুলাই পর্যন্ত কাজ করে, যার আহবায়ক ছিলেন লিয়াকত আলী ।

যুদ্ধের মধ্যেও রাজনীতির প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নদীয়ার রানাঘাটে জনাব আহসানউল্লাহ এমপিএকে অধ্যক্ষ এবং তৎকালীন জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আনোয়ার আলী ও ছাত্রনেতা খন্দকার রশিদুজ্জামান দুদুকে শিক্ষক নিয়োগ করে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তিনমাস মত পরিচালিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসাবে কাজ করেছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলিরা অধিকাংশ ছিলেন কুষ্টিয়ার। সুরসেনা আব্দুল জব্বারের কন্ঠে দেশাত্ববোধক গান মুক্তিযোদ্ধারে প্রেরণা যুগিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতারের জল্লাদের দরবার অনুষ্ঠানটির কথা মনে হলে সকলের মানসপটে ভেসে উঠে রাজু আহম্মেদ ও বাবুয়া বোসের নাম । জল্লাদের দরবার অনুষ্ঠানটির রচয়িতা কুষ্টিয়ার কল্যাণ মিত্র। আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম আমিনুল হক বাদশা।

এদেশের মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার যাঁদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁরা হলেন লাখো লাখো স্থানীয় জনগনসহ আজিজুর রহমান আক্কাস (তৎকালীন এমএনএ), ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম (তৎকালীন এমএনএ ও প্রধানমন্ত্রীর পিএস), আব্দুর রউফ চৌধুরী (তৎকালীন এমপিএ), ব্যারিস্টার বাদল রশিদ (মুক্তিযুদ্ধে লিয়াজো অফিসার), সহিউদ্দিন আহম্মদ, আহসান উল্লাহ (তৎকালীন এমপিএ), গোলাম কিবরিয়া (তৎকালীন এমপিএ), নুরুল হক (তৎকালীন এমপিএ), এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী (তৎকালীন এমপিএ), শামসুল হক (তৎকালীন ডিসি,কুষ্টিয়া), তৌফিক এলাহী চৌধুরী (তৎকালীন এসডিও,মেহেরপুর), ডা. আসাবুল হক(তৎকালীন এমপিএ এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী সরকার পরিচালিত বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান) প্রমুখ।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন