বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

আজাদীর বীর সেনানী - কুমারখালির কাজি মিঞাজান
আজাদীর বীর সেনানী - কুমারখালির কাজি মিঞাজান

বাদশাহী ও নবাবী আমলের ‘মুলুক ফতেয়াবাদের বানিজ্যিক বন্দর, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং ভিক্টোরিয়ান আমলের ব্যাবসা-বানিজ্য কেন্দ্র, তখনকার পাবনা জেলার একটি মহাকুমা শহর এবং পরে ১৮৭১ খৃষ্টাব্দ থেকে বর্তমানের কুষ্টিয়া জেলার একটি থানা শহরে, রেল ষ্টেশন এবং কাপড়ের হাটের জন্য বিখ্যাত কুমারখালি। ১৮৬১ খৃষ্টাব্দে এখানে একটি মিউনিসিপ্যালিটি স্থাপিত হয়।

বাদশাহী ও নবাবী আমলে বহু বৈদেশিক পর্যটকের বৃত্তান্তে কুমারখালি বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে রেশন, সূক্ষ বস্ত্র, চাউল, লবণ প্রভূতি এখানে বিদেশ থেকে রফতানী করা হত। এসব বিবরণ র‍্যালফফিচ, ট্রেভারনিয়ার, বোলটস প্রমুখ ভ্রমণকারীর বিবরণ থেকে জানা যায়।

বিশেষ করে কুমারখালির বস্ত্র শিল্পের সুখ্যাতি ছিল দুনিয়া জোড়া। ‘আসমান তারা’ ‘ময়ূর পেখম’ শাড়ী ও ‘নয়নসুখ’ কাপড়ের জন্য কুমারখালির সেকালের প্রসিদ্ধি ছিল। এখানকার তৈরী নৌকার খ্যাতিও ছিল প্রচুর।

ইউওরাপীয় বণিকগণ অনেক আগে থেকেই এখানে ব্যাবসা বানিজ্য করত। মীর জাফরের নবাবী আমলে তারা এখানে স্থায়ীভাবে রেশনকুঠি নির্মাণ করে। বর্তমানে কুমারখালির রেল স্টেশন সংলগ্ন প্রাচীর বেষ্টিত খৃষ্টানদের একটি গোরস্থান আছে। এই গোরস্থানের সর্বশেষ কবরটির প্রস্তর ফলকে ১৭৯৪ খৃষ্টাব্দ এবং মৃত্যুর নাম মিস এলিজাবেদের হান্না-নর্র্টন উৎকীর্ণ হয়েছে।

অষ্টাদশ শতকের শেষ নাগাদ অথবা উনবিংশ শতকের প্রথম দশকের দিকে কুমারখালী শহর সংলগ্ন দুর্গাপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে কাজী মিয়াজান জন্মগ্রহণ করেন। অনেকে তাঁকে মিয়াজান কাজী বলেও ডাকতো। খুব সম্ভব ১৮০৯ অথবা ১৮১০ খৃষ্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়েছিল।

যতদূর জানা যায়, তিনি বাল্য ও কৌশরে মক্তবে বিদ্যাশিক্ষা করেন। অনেকের মতে স্বগৃহে। ধীরস্থির, অল্পভাষী এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে তিনি সমবয়স্কদের অপেক্ষা অনেক স্বাতন্ত্রের অধিকারী। কৈশরেই তিনি লাঠি, শড়কি. তলোয়ার, যাদুবিদ্যা ও বন্দুক চালনায় পারদর্শী হয়েছিলেন। তৎকালীন বিভিন্ন ঘটনা ও পারিবারিক অবস্থায় তাঁর চিন্তা মানস গঠিত হয়।

১৮০০ খৃষ্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এই অঞ্চলের পরগণা বিরাহিমপুর জমিদারী খরিদ করেন এবং তদন্তর্গত শিলাইদহের মিঃ শেলী নামক জনৈক ইউরোপীয়ানের নীলকুঠি খরিদ করেন। উক্ত শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতেই বিরাহিমপুর জমিদারির সময় কাচারি স্থাপন করেন।

এই সময় খুব অল্প কিছু সংখ্যক মুসলমানদের মধ্যেই ইসলামী রীতি-নীতি প্রচলিত ছিল। বাদবাকী অন্যেরা ছিল নামে মাত্র মুসলমান। আচার-ব্যবহার, রীতি-রেওয়াজ একরুপ পালন করতো না বলা চলে। হিন্দুদের অনুকরণই তারা করত। কুমারখালি থেকে প্রকাশিত ও কাঙাল হরিনাথ মজুমদার সম্পাদিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিত’ পত্রিকার ‘ভারতবাসী মুসলমান’ শীর্ষক একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধের সম্পাদকীয়তে এর উল্লেখ রয়েছে।

ঠাকুর বাড়ীর ঐ জমিদারীর অন্তর্গত একটি গ্রামের জনৈক মুসলমান কাচারির বিঘোষিত আদেশ অমান্য করে গরু কোরবানী করায় কঠিন নিগ্রহ ভোগ করে এবং তার প্রতিবেশীরাও যথেষ্ট শাস্তি পায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমগ্র কুমারখালি ও খোকসা এলাকায় মুসলিম প্রজাগণ ঠাকুর জমিদারদের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন খোকসার রুমি পরিবারের জনৈক ভদ্রলোক। কুমারখালির কাজী মিয়াজানের পরিবার এবং অন্যান্য বহু মুসলমান এই বিরাট আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এই ঘটনার কিছুদিন পর বর্তমান ফরিদপুরের অন্তর্গত পাংশার জমিদার ভৈরববাবু ও অন্যান্য হিন্দু জমিদারগণ পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের পথ অনুসরণ করে মুসলমানদের দাঁড়ির উপরে ট্যাক্স, মুসলমানী নাম বদলানোর চেষ্টা শুরু করেন। পুজা পার্বনের বাধ্যতামূলক চাঁদা, ভেট, মাথট প্রভূতি আদায় এসব তো ছিলই।

কুমারখালির পূর্ব পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর এবং তদন্তর্গত বাহাদুরপুরের হাজী শরিয়ত উল্লা (১৭৮৬-১৮৩১) পশ্চিমে বারাসতের নারিকেল বাড়িয়ায় তীতুমীর (মীর নিসার আলী) (১৭৮২-১৮৩১) এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ এবং প্রজাদের নিয়ে সংগ্রাম শুরু করেন।

এই সময়ে সৈয়দ আহমদ শহীদ (১৭৮৬-১৮৩১) ভারতের প্রায় সবখানেই সংগঠক পাঠিয়েছিলেন এবং স্বয়ং শিখ ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করেছিলেন। তাঁর কাছে এইসব অঞ্চল থেকে এবং বিশেষ করে কুমারখালি হতে মুজাহিদ রিক্রুট ও অর্থ সংগ্রহ করে পাঠাতে হত।

সৈয়দ আহমদ শহীদের অন্যতম খলিফা মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ছিলেন এই অঞ্চলেরই অর্থ্যাৎ নদীয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) মেহেরপুর মহাকুমার অন্তর্গত বাজিতপুরের অধিবাসী।

এইসব ঘটনাপ্রবাহ ও পারিপার্শ্বিকতায় গঠিত হয়েছিল কাজী মিঞাজানের যৌবনকাল ও ভবিষ্যৎ বিপ্লবী জীবন।

১৭৭৭-৭৮ খৃষ্টাব্দের মেজর রেনেলকৃত জরিপের পর ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দের যশোর, কুষ্টিয়া (পুরাতন কুষ্টিয়া), ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন থানাগুলি নিয়ে ১৭৮৪ খৃষ্টাব্দে স্যার জন সোবের গঠিত জেলার পরে পাবনা জেলা গঠিত হয়। তখন কুমারখালি পাবনার অন্তর্গত হয়েছিল।

উনবিংশ শতকের শুরু থেকেই এইসব অঞ্চলে ওহাবী তৎপরতা আরম্ভ হয়। পরে এই আন্দোলনের মূল যোগাযোগ রাজশাহীর স্বপ্নরা, রংপুর, পাটনা ও সিতানার সঙ্গে স্থাপিত হয়।

তখন বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা, আলমডাঙ্গা, মীরপুর প্রভূতি অঞ্চলে এই তৎপরতা ক্রমশ বেড়ে ওঠে কুমারখালিকে কেন্দ্র করে।

কিছুকালের মধ্যে তিতুমীরের (মীর নিসার আলীর) পতনের পর (১৮৩১) থেকে অন্যান্য অঞ্চলের মত উপরোক্ত স্থানগুলির ওহাবীদের লক্ষ্যে সীমান্তের জেহাদের প্রতি নিবদ্ধ হয়। যতদূর জানা যায় কাজী মিঞাজান এইসব অঞ্চল থেকে মুজাহিদ ও অর্থ সংগ্রহ করে সীমান্তে পাঠানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এইসব মুজাহিদরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পদব্রজে মুসাফির বেশে রংপুর অথবা মালদহ হয়ে পাটনা যেতেন। এইসব কাজ অত্যন্ত দক্ষতা ও গোপনীয়ভাবে করা হতো।

এই সময়ের আরো কিছুকাল পরের ঘটনা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কুমারখালির আশেপাশের ধোপরাকোল, হিজলা বট, কনঠমাজরা, কুমিদপুর, কুষ্টিয়া (পুরাতন), জগতী, চেঁচুয়া, হরিণাকুন্ডু, মধুপুর, শালঘর মধুয়া, নোয়াপাড়া প্রভূতি নীলকুঠির নীলকর সাহেবদের অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছে। প্রজাগণও সংঘবদ্ধ হতে থাকে। এর মূলেও ওহাবীরা ছিলেন। কাজী মিঞাজানও যথেষ্ট সহায়তা করেছিলেন।

উপরোক্ত কুঠিগুলো ১৭৯৫-১৮৩০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে এবং তার পরবর্তীকালেও অনেকগুলি স্থাপিত হয়। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের অল্প আগে এই নীলকরদের অত্যাচার উৎপীড়ন প্রজাগনকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল।

কাজী মিঞাজানের জীবনকালে এরুপ একটির পর একটি ঘটনা ঢেউয়ের পর ঢেউ তুলেছিল। এসবের কোনটা থেকেই নিজেকে তিনি সরিয়ে রাখেন নাই।

১৮৫৭-এর মহাবিপ্লব এবং তার পরবর্তী ঘটনাসমূহ তাঁর মনকে আরও বিদ্রোহী করে তুলেছিল। সেই সময় যশোর, বারাসাত প্রভূতি ও তৎকালীন নদীয়া ডিভিশন এবং এই ডিভিশনের বৃটিশ বিরোধীদের কার্যকলাপের বৃত্তান্ত মিঃ জে, পি, সি, গ্যারেট আই, সি.এন লিখিত নদীয়া ডিষ্টিক্ট গেজেটিয়ারে বিশেষভাবে লিখিত আছে।

কিন্তু অলিখিত একটি নিদারুণ ঘটনা যা আজও সকরুণ হয়ে সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে রয়েছে-তা হচ্ছে মেমনগর কাপাস ডাঙ্গার নিকটবর্তী ‘গলায়দড়ি ঘাট’ এবং এর নামকরণ। কেবলমাত্র সন্দেহ এবং অনুমান বশতঃ বহুসংখ্যক মুসলমানকে রাস্তার দুই পার্শ্বে গাছের ডালে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। লাশগুলি দীর্ঘদিন ধরে এইভাবেই ঝুলেছিল, নামাতে দেওয়া হয়নি, যাতে অন্যান্য সকলে এদের পরিণাম দেখে ভয় পায়। এদের অপরাধ ছিল নামায পড়া, টুপি ও লুঙ্গি পরিধান করা, অত্এব ওহাবী, সুতরাং বিদ্রোহী এবং দন্ডনীয়। এই দন্ডদাতাগণ ছিলেন ম্যাজিষ্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিথ্যাত ‘কাচিকাটা কনসার্নের’ অন্তর্গত কাপাসডাঙ্গার ইউরোপীয়ান কুঠিয়ালেরা।

কাপাসডাঙ্গার সন্নিকটেই দামুড়সুদা। সমসাময়িক কালে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রথম উদগাতা কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় এখানেই লিখেছিলেন ‘কর্মদেবী’ ও ‘পদ্মিনী’ উপাখ্যান।

এই কাপাসডাঙ্গা ও দামুড়সুদা বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা মহাকুমার অন্তর্গত। পূর্বে এখানে মুন্সেফ ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট ছিল। সেই সময়ে কাজি মিঞাজানের বাসভূমি কুমারখালি এবং সর্বত্র হিন্দু সমাজ সরকারের নেক নজরের বদৌলতে সবধরনের সুযোগ সুবিধা লাভ করে নিজেদের সমাজকে সুগঠিত করে তুলেছিল।

১৮৫৪-৫৫-৫৬ তে কুমারখালিতে একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, একটি পাঠাগার ও গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে গ্রামবাংলা প্রকাশিকা পত্রিকা কলিকাতায় গিরিশ বিদ্যালয় প্রেসে মুদ্রিত হয়ে আসত।

১৮৬৩ সালের মাঝামাঝি মুজাহিদ বাহিনীর আর একটি যুদ্ধের অয়োজনে কাজী মিঞাজান ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময়ে তাঁর জনৈক আত্নীয় ঘটনাক্রমে এই ব্যাপারে কিচুটা জ্ঞাত হন এবং পদোন্নতির লোভে গুপ্তভাবে সন্ধান দিতে থাকেন। শোনা যায়, উনি পুলিশ বিভাগে চাকুরী করতেন।

এরপর সীমান্তের ঐ যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি জেনারেল চেম্বারলেন সসৈন্যে পরাজিত ও গুরুতরভাবে আহত হন। ‘তাওয়ারিক-ই-আজীব’ থেকে জানা যায়, ১৮৬৩ সালের ১১ ডিসেম্বর এই যুদ্ধ হয়েছিল।

উক্ত দিবসে কর্ণালের গাজন খাঁ নামক একজন ছদ্মবেশী পাঠান পুলিশ কর্মচারী মুজাহিদ পরিচয় দিয়ে থানেশ্বরের সরকারী কর্মচারী মোহাম্মাদ জাফরের মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে গাজন খাঁ আম্বালার কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন।

সেই দিনই শেষ রাত্রে ক্যাপ্টেন পার্সন মোহাম্মাদ জাফর খানের শরীর ও গৃহ তল্লাশ করে গোপনীয় পত্রাদি হস্তগত করে। অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে এক বাঙালী কিশোরও কখন বন্দী হয়। তার নাম আব্বাস।

এরপরই ক্যাপ্টেন পার্সন সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে বিহার ও বাংলার বহু লোককে গ্রেফতার করেন। তাদের মধ্যে কাজী মিঞাজান অন্যতম। শোনা যায় সেই সময় নাকি তিনি সীমান্ত গমনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ঠিক তার পূর্ব মহুর্তে তাঁকে বন্দী করা হয়।

আম্বালা-কারাগারে মানুষকে যত রকমের যন্ত্রনা দেওয়া যায়, তা উদ্ভাবন করা হতো। প্রাণ ধারণের জন্য দেওয়া হতো ধুলা মিশ্রিত বাজরার রুটি এবং কিছু পানি, পরিধানের জন্য কম্বলের কোর্তা, হাতে হাত কড়া, পায়ে বেড়ী। এ্রর উপরে আবার হাত ও পায়ের কড়া ও বেড়ীর সঙ্গে লম্বালম্বিভাবে আটকায়ে দেওয়া হতো একটি লৌহদন্ড। এতে কোন রকমে কাৎ হয়ে পড়ে থাকা ছাড়া হাত-পা মেলে শোয়ার উপায় ছিল না।

অন্ধকার অপরিসর ‘শেল’ এ তাঁদেরকে আলাদাভাবে রাখা হতো। প্রত্যেক দিনই অসহ্য শারীরিক শক্তি, মনোরম প্রলোভন, নগদ টাকা, খাসমহলের জমি, ভাল সরকারী চাকুরি, ভাতা এবং পরিবার পরিজনের উপর কোনরুপ অত্যাচার না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো।

কিন্তু তারা প্রত্যহই একই কথা বলতেন : “কসম করেছি, কিছুই বলতে পারব না।”

 

মোকাদ্দমা চলাকালীন মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করায় ক্যাপ্টেন পার্সসের নির্মম প্রহারে আব্বাসের মৃত্যু হয়। সেই বাঙালী কিশোর মুজাহিদের পরিচয়ের মত আরও অসংখ্য বাঙালী মুজাহিদের পরিচয় আজও আমাদের অজ্ঞাত রয়েছে।

১৮৬৪ খৃষ্টাব্দের মাঝামাঝি আজাদীর বীর সেনানী কুমারখালির কাজী মিঞাজানকে জেল হাসপাতালে দেওয়া হয়। তিনি হাসপাতালে একটু সুস্থ হয়ে উঠলে মাঝে মাঝে অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করতেন, তাঁদের খোঁজ খবর নিতেন।

মোহাম্মদ জাফর পানেশ্বরী তাঁর ‘তওয়ারিখ-ই-আজীব’ এ লিখেছেন : মৃত্যুর একদিন কি দু’দিন আগে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, উর্দ্ধলোক থেকে একটি সিংহাসন নেমে এসে তাঁকে নিয়ে আবার উর্দ্ধলোকে উঠে গেল।

এর পরদিনই কাজী মিঞাজান ইন্তেকাল করেন। আম্বালার জেলখানার গোরস্থানেই তাঁকে দাফন করা হয়।

এই সর্বস্বত্যাগী মুজাহিদেরা চেয়েছিলেন, মুক্ত আলোয় ভরা আকাশ, আর মুক্ত বাতাস। তাঁরা চেয়েছিলেন স্বাধীন দেশ-যেখানে তাঁদের জীবন হবে সহজ ও সুন্দর।

আজকের এই আজাদ পাকিস্তান তাঁদেরই স্বপ্ন, তাঁদেরই সাধনা। তথা বর্তমান বাংলাদেশের।

সহায়ক পুস্তক-পত্রিকাঃ-

  1. নদীয়া গেজেটিয়ার : জেপি গ্যারেট আই.সি. এস।
  2. পাবনা জেলার ইতিহাস : রাধা রমন সাহা।
  3. নদীয়া কাহিনী : কুমূদ নাথ মল্লিক।
  4. যশোহর-খুলনার ইতিহাস : সতীষ চন্দ্র মিত্র।
  5. সংবাদপত্রে সেকালের কথা : ব্রজেন্দ্র নাথ বন্দোপাধ্যায়।
  6. উদাসীন পথিকের মনের কথা : মীর মোশাররফ হোসেন।
  7. ইন্ডিয়ান মুসলমান (হান্টার) : জাস্টিস আবদুল মওদুদ, বাংলা একাডেমী অনুদিত।
  8. ৮। তওয়ারিখ-ই-আজীব : থানেশ্বরী, বাঙলা একাডেমী অনুদিত।
  9. মীর মানস : মুনীর চৌধুরী, বাংলা একাডেমী।
  10. প্রবন্ধ বিচিত্রা : সৈয়দ মর্তুজা আলী, বাংলা একাডেমী।
  11. মাহে নও, পাকিস্তান পাবলিকেশন।
  12. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা : ১৮৭৪।
  13. পথের দিশারী : আকবর উদ্দীন।
  14. আধুনিক কাহিনী-কাব্যে মুসলিম জীবনচিত্র : মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রবন্ধটি লিখেছেনঃ- কবি আজিজুর রাহমান।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ- মোঃ শামসুর রহমান (কবির দ্বিতীয় পুত্র), মোঃ শফিকুর রাহমান লাল (কবির নাতী)।

সংগ্রহঃ মোঃ সালেকউদ্দিন শেখ সুমন।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন