বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

লালন সাঁই সকল ধর্মের - লোকমান হোসেন মিয়া
লালন সাঁই সকল ধর্মের - লোকমান হোসেন মিয়া

লালন সাঁই সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি গানে গভীর জ্ঞান আমাকে সত্যিকার অর্থে বিমোহীত করেছে। কারো কারো মতে নিরক্ষর হয়েও তিনি জ্ঞানভান্ডারে এক অনাবিস্কার পৃথিবী। তাঁকে চিনতে অনেক দেশ বহুভাবে উপস্থাপন করেছেন। আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হিসেবে সত্য ও জাতহীন সমাজ গড়তে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। লালন সাঁই এক বিশ্ব মানব। লালন সাঁই ছিলেন বাঙালি জাতিসত্বা বোধের প্রবাদ পুরুষ।

আজকের যুগেও তিনি মানুষের হৃদয়ের মাঝখানটা দখল করে আছেন। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় গবেষনা হচ্ছে। হচ্ছে তাঁর গানের ভাষান্তর। যুগে যুগে মানুষের কল্যাণে জ্ঞানী-গুনি ও পথ প্রদর্শকদের জন্ম। তেমনি কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার পবিত্র মাটিতে লালন সাঁইয়ের মত মহাত্মা মহাজ্ঞানীর আর্বিভাব হয়েছে। মানবজনমের পূর্নজন্মে লালন কোন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন না। লালন সাঁই সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে ছেউড়িয়ার আঁখরা বাড়ীতে লালন একাডেমীর আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকীর লালন সাঁইয়ের স্মরণ উৎসব এবং দোল পূর্ণিমা মেলা উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, লালন সাঁই মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই অসংখ্য গান লিখে গেছেন। মানুষকে ভজলে যে প্রকৃত সরল ও খাঁটি মানুষ হওয়া যায় লালন মানুষকে শিখিয়েছিলেন। ধর্মের বেড়াজালে মানুষকে আটকিয়ে রাখা যাবে না। কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। সকল ধর্মের উপর মানব ধর্ম। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষিত। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যানে কি অসীম কথা বলেছেন তিনি। দেহ এবং আত্মার মাঝে বসবাসকারীকে আমরা সহসায় না চিনতে পারলেও লালন সাঁই গানের মধ্যে চিনিয়ে দিয়েছেন সে কোনজনা।

তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে হলি খেলা চলছে বিশ্বে। নিউজিল্যান্ডে ধর্মেরই সুরসুরির কারনে মসজিদে ঢুকে মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হামলা তারই প্রমান মেলা। সভ্যতার নামে আমরা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

প্রধান অতিথি আগামী দিনের নেতৃত্বদানকারী যুব সমাজের প্রতি আহব্বান রেখে বলেন, মাদকের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের সন্তানকে রক্ষা করতে আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখুন। সময় এসেছে লালন সাইয়ের আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের সন্তানকে সুপথে পরিচালিত করার। এরপর তিনি একটি লিফলেট পড়ে শুনান। দেশ ও জাতির কল্যানে তাদেরকে গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করুন।

বাউল সম্রাট ফকীর লালন সাঁই ছিলেন বাঙ্গালির আধুনিক সমাজ বিন্যাসের রুপকার। লালনের এই পুণ্য ভুমিতে তাঁকে স্মরণ করতে তিনি তাঁর যোগ্য শিষ্যদের রেখে গেছেন। যুগে যুগে তাঁর ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন তাঁরা। তাঁরা মানবতার আবধারা কুষ্টিয়াকে ভাববাদের রাজধানীতে পরিনত করেছেন। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে বাউল সম্ব্রাত ফকীর লালন সাঁইয়ের গান, ধর্ম দর্শনের চিরাচারিত “সত্য বল সু পথে চল ওরে আমার মন” এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সভ্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখার আহব্বান জানান তিনি।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক স্বরজ কুমার নাথ, কুষ্টিয়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৃনাল কান্তি দে, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু, জেলা জাসদের সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম মহসিন, প্রমুখ।

ফকির লালন সাঁইয়ের আধ্যাত্মিকতা তুলে ধরে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্র্রফেসর ড. সেলিম তোহা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এ্যাডহক কমিটির সদস্য ও কুমারখালি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান।

এবারের স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের অঙ্গীকার। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির জাতহীন মানব দর্শনের “মনের গরল যাবে যখন, সুধাময় সব দেখবি তখন” এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যতিত অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। এ ব্যাপারে আরো উদ্দ্যেগী হতে হবে। মানবতা মুক্তি ও ভক্তির পথকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি হাজারো ভাবধারার গান সৃষ্টি করছেন। কিন্তু তা বিশ্ববাসীকে নাড়া দিতে পারেনি যথার্থ একাডেমিক প্রচার আর প্রকাশনার অভাবে। তিনি অতি কঠিন কথাগুলো খুব সহজ করে তার গানে বলে গেছেন। তাঁর অমর সৃষ্টি সঙ্গীত গতানুগতিক ভাবে প্রচার ও প্রকাশ হলে চলবেনা। বিশ্বের বিশিষ্ট গবেষকেরা লালনের সৃষ্টি আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে চাই।

লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন ৩দিনের স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান সফল স্বার্থক ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আইনশৃংখলায় নিয়োজিত পুলিশ, র‌্যাব, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ, দেশ-বিদেশ থেকে আসা লালন সাঁইয়ের অগনিত ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরু, সাংবাদিক সহ এলাকার সুধীজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও আগামী ডুরোধান দিবসের অগ্রীম আমন্ত্রণ ও ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীতি পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন উপহমাদেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী সমীর বাউল, সুফিয়া কাঙ্গালিনীসহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব দিবসের অনুষ্ঠানমালার উপস্থাপনা করেন কুষ্টিয়া সদও উপজেলা এসিল্যান্ড ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মুছাব্বেরুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর আক্তার, ফারহানা ইয়াসমিন, কনক চৌধুরী।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন